এই শীতে ত্বক সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে
লাইফস্টাইল ডেস্ক: শীত এলেই পরিবেশের তাপমাত্রা ও বাতাসের আদ্রতা কমে যায়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক ও খসখসে। ঘরের হিটার কিংবা গিজারের গরম পানি ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা আরও কমিয়ে দেয়। যার কারণে উইন্টার ইচ, ত্বক জ্বালা করা, একজিমা কিংবা ত্বকে ফাটল দেখা যায়। অথচ ত্বক শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এটি আমাদের শরীরকে বাইরের ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাই শীতে ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।শীতকালে ত্বককে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে ১০টি কার্যকর উপায়-১. প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুনশুষ্ক বা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য পেট্রোলিয়াম বা ক্রিম-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার সবচেয়ে ভালো। সংবেদনশীল ত্বক হলে সুগন্ধি বা ল্যানোলিনমুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। গোসলের পর ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে আর্দ্রতা ধরে রাখতে বেশি কার্যকর।২. ত্বক পরিষ্কার করুন, তবে অতিরিক্ত নয়বারবার মুখ বা শরীর ধোয়া ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন মুখ, হাত, পা এবং ত্বকের ভাঁজগুলো পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট। অতিরিক্ত সাবানের ব্যবহার না করাই ভালো।৩. গরম পানি ও সাবান কম ব্যবহার করুন‘উইন্টার ইচ’ হলে গরম পানি নয়, কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময় গোসল করুন। হালকা ক্লিনেজার ব্যবহার করুন। গোসলের পর তোয়ালে দিয়ে ঘষে নয়, হালকা চাপ দিয়ে শুকিয়ে নিন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘন ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম-জাত ময়েশ্চারাইজার লাগান।৪. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুনঘরের বাতাস খুব শুষ্ক হলে ত্বকের আর্দ্রতা দ্রুত নষ্ট হয়। ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে ত্বক আর্দ্র থাকে। তবে যন্ত্রটি নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি, নয়তো ছাঁচ বা ফাঙ্গাস হতে পারে।৫. বাতাস থেকে ত্বককে রক্ষা করুনঠান্ডা বাতাস ত্বককে দ্রুত শুকিয়ে ফেলে। বাইরে গেলে মুখ ঢেকে রাখুন, লিপ বাম ব্যবহার করুন। পেট্রোলিয়াম–সমৃদ্ধ স্কিন প্রোটেকটেন্ট বা সিরামাইডযুক্ত ক্রিম ঠান্ডায় বেশ কার্যকর।৬. অতিরিক্ত ঠান্ডা এড়িয়ে চলুনঅত্যন্ত কম তাপমাত্রা ত্বকে ফ্রস্টবাইট বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাত-পায়ে রং পরিবর্তন, ব্যথা বা ঘা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। প্রচণ্ড ব্যথার পর অনুভূতি হারিয়ে গেলে সেটা ফ্রস্টবাইটের লক্ষণ হতে পারে।৭. শীতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুনশীতে সূর্য ততটা তীব্র মনে না হলেও তার ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। বাইরে দীর্ঘ সময় থাকলে কমপক্ষে এসপিএফ ১৫ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত রোদ ত্বকের অকাল বার্ধক্য ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।৮. শীতে ট্যানিং থেকে দূরে থাকুনট্যানিং বেড বা কৃত্রিম সানল্যাম্প ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ‘গ্লো’ চাইলে সেলফ-ট্যানার ব্যবহার করতে পারেন, তবে তা ত্বক শুকিয়ে দিতে পারে তাই অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার লাগান।৯. ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করুনগ্রীষ্মে সূর্যের আলোর কারণে শরীরে ভিটামিন ডি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শীতে সূর্য কম পাওয়ায় ভিটামিন ডি কমে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।১০. ত্বকে জটিলতা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিনশুষ্কতা, চুলকানি, লালচে দাগ, র্যাশ বা যেকোনও ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে দেরি না করে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যান। ত্বকের সমস্যা শুধু শীত নয়, যেকোনও সময়ই নজরে রাখা জরুরি।শীতে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে একটু বাড়তি যত্নই যথেষ্ট। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, সঠিকভাবে গোসল, হিউমিডিফায়ার, সানস্ক্রিন এবং উপযুক্ত সুরক্ষা এসব অভ্যাস শীতের রুক্ষ আবহাওয়া থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে। মনে রাখবেন, সুস্থ ত্বক শুধু সৌন্দর্যের অংশ নয়, এটি আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। তাই শীতকে উপভোগ করুন, নিজের ত্বকের যত্নে সচেতন থাকুন।সূত্র: নিউইয়র্ক প্রেস বাই ট্রেইনার