• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:২২:৩৬ (03-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ০৯:২২:৩৬ (03-Dec-2024)
  • - ৩৩° সে:

মোংলায় সরকারি জমি দখল করে বালু খাদকদের রমরমা ব্যবসা

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোংলার সিগন্যাল টাওয়ারের দক্ষিণ চর এলাকায় সরকারি খাস জমি দখল করে বালু খাদকদের রমরমা ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। খাবার থালায় বালু, ভাতের পাতিলে বালু, পানির গ্লাসে বালু, পেটে বালু, চোখে বালু, বিছানায় বালু, বাড়ির উঠানে বালু, বাড়ির চারিপাশে বালু। দোকানপাটে বালু আর বালুই যেন তাদের জীবন।বালুতেই অসহায়দের জীবন বন্দী। আবার এই বালুতে ফুলে ফেঁপে কোটিপতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাদ পড়ছে না প্রশাসনও। এটা কোনো মরুভূমি নয়। এ বালুর পর্বত বেস্টনিতে রয়েছে অসহায় কয়েক শত পরিবারের হাজার মানুষ সংযুক্ত। কিছুই বলার নেই। কারণ সবাই বালুর সঙ্গে যুক্ত।যেখানে সরকার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুস্থ অসহায় মানুষের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেছে গুচ্ছগ্রাম। যেখানে বসবাস করছে সুবিধাবঞ্চিত অসহায় কয়েক হাজার মানুষ, শিশু কিশোর, বৃদ্ধ। বালু খাদকদের নিকট অসহায় এসব মানুষ। প্রতিবাদ নয়, কোনো রকম টু-শব্দ করার শক্তি নেই। অসহ্য হয়ে কেউ শুধু মুখটা হা করলেই নেমে আসে দুর্বলের প্রতি সবল প্রভাবশালী বালু খাদকদের চরম নির্যাতন। এটা এই এলাকার মানুষের জীবনের চরম অভিশপ। লঙ্ঘিত হচ্ছে মানুষের অধিকার। কারণ কারও কাছে ভাগের টাকা পৌঁছায় রাতে। কারও নিকট দিনের আলোয় অফিসে। আর অবৈধভাবে মোংলা পশুর নদী থেকে বালু উত্তোলন ও অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে সেখানে বালু রেখে ব্যবসা করায় সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হারাচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এটাই পশুর নদীর তীরবর্তী বালু মহাল ঘিরে যুগ থেকে যুগের বাস্তব চিত্র।২৩ অক্টোবর বুধবার সকালে মোংলার সিগন্যাল টাওয়ারের দক্ষিণ চর এলাকার সরজমিন ঘুরে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বললে এশিয়ান টেলিভিশনের কাছে বেরিয়ে আসেন কষ্ট, অসহায়ত্বের ও নির্যাতনের এমন বাস্তব গল্প। মোংলার পশুর নদী থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু বা রাখা হচ্ছে সরকারি খাস জমিতে। সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিক্রয় করা হচ্ছে বালু।এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীরা এশিয়ান টেলিভিশনকে বলেন, আমাদের ঘরে এসে দেখেন। আমরা কীভাবে বসবাস করি ও খাবার খাই। পরীক্ষা করে দেখেন আমাদের পেটে কতো বালু। খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন কত শিশুসহ মানুষের চোখ বালু কণা পড়ে ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির চারিদিকে বালুর বিশাল বিশাল স্তূপ করে রাখা হয়। একটু বাতাস হলেই এলাকায় মরুভূমির মতো বালু ঝড় হয়ে যায়। বালুতে সব ঢেকে যায়। বালুর কারণে এলাকায় সবজি ও ফলের ফলন কমে গেছে। দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা বালুর গাড়ির চলাফেরা করে। সব মিলিয়ে বালুর মধ্যেই আমাদের অসহায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের  হুমকি ধামকিসহ যে কোনো সমস্যায় ফেলবে বা মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা বলেন, তাই আমরা কোনো পথ ও উপায় খুঁজে না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আশাকরি তিনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন।এ বিষয়ে মো. মোশারেফ নামের এক ভুক্তভোগী এশিয়ান টেলিভিশনকে বলেন, আমরা খুবই গরিব, দুস্থ ও অসহায়। আমরা নদী ভাঙনে শিকার হয়ে এই গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা হয়েছি। আবার কেউ কেউ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট থেকে জমি লিজ নিয়ে বসতি গড়ে তুলেছেন। তবে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দখল করে তাদের ঘর বাড়ির চারপাশজুড়ে কোটি কোটি টাকার বালু মোংলা পশুর নদী থেকে উত্তোলন করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন এলাকার ২৫/৩০ বালু খাদক। এসব প্রভাবশালী বালু খাদকরা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক।এ অভিযোগের বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী মো. মনিরের কাছে প্রশ্ন করেন এশিয়ান টেলিভিশনকে তিনি বলেন, আমরা কিছু সরকারি জমিতে বালু রেখে ব্যবসা করছি। বাতাস হলে বালু উড়বে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। এটা সবাই মেনে নিয়েছে।এ বিষয়ে তিনি এশিয়ান টেলিভিশনকে আরও বলেন, আমাদের গুচ্ছগ্রামের চারিপাশে রাখা বালুতে একটু সমস্যা হতেই পারে। নদীর পাড়ে (নিচে) রাখা বালুতে তেমন একটা অসুবিধা হয় না। পরিবেশের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে আমরা স্বীকার করছি। এই বালুমহালের কোনো ব্যবসায়ীর পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যাবসায়িক ছাড়পত্র নেই। আমরা জানতে পারছি একটি কুচক্রী মহল আমাদের বালু ব্যবসার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন। তিনি যদি এসে এখানে বালুর ব্যবসা করতে নিষেধ করেন তাহলে আমরা এখানে আর বালুর ব্যবসা করবো না।এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এশিয়ান টেলিভিশনকে বলেন, সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করছে একটি কুচক্র মহল। এ বিষয়ে আমরা একটি লিখিত অভিযোগ কপি পেয়েছি। আমরা কোনোভাবেই সরকারি জমি দখল বা বালু ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। অতি শিগগিরই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।