• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ৫ই কার্তিক ১৪৩২ বিকাল ০৪:০৮:৩৮ (20-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

৩০ বছর পর বুড়ির মেলায় এসে দেখা হলো দুই বোনের

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: একটি সীমারেখা দুটি দেশকে ভাগ করলেও ভাগ করতে পারেনি রক্তের সম্পর্ক। কালীপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অনুষ্ঠিত হলো মানুষের মিলন ও আবেগের উৎসব সীমান্ত মিলন মেলা।১৯ অক্টোবর রোববার লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ও মোগলহাট সীমান্তে কুমারপাড়া দিঘলটারীর ৯২৭ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে, ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার দরিবস গ্রামের জারিঝল্লা এলাকায় দিনভর এই ঐতিহ্যবাহী মেলা অনুষ্ঠিত হয়।প্রতি বছরের মতো এবারও ‘বুড়ির মেলা’ উপলক্ষে সীমান্তের দুই পাশে জড়ো হয়েছিল হাজারো মানুষ। একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে বেদনা— সব মিলিয়ে সীমান্তজুড়ে বইছিল আবেগঘন পরিবেশ।৩০ বছর পর দুই বোনের হলো দেখা: ভারতের দিনহাটা থেকে আসা সুভদ্রা বর্ম্মন (৫০) দীর্ঘ ৩০ বছর পর তার বাংলাদেশে বসবাসরত বড় বোনের দেখা পান এ মেলায় এসে। বড় বোনের গলা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। দুই বোনের সেই আনন্দাশ্রু মুহূর্তেই ভারি করে তোলে সীমান্তের বাতাস।ভারতের আলিপুরদুয়ার থেকেও অনেকেই এসেছিলেন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে— কেউ দেবর-জা, কেউ ভ্রাতুষ্পুত্র, কেউবা বহু বছর পর জন্মভূমি বাংলাদেশের আত্মীয়দের দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসেছিলেন।আত্মীয়দের মধ্যে উপহার হিসেবে বিনিময় হয় মিষ্টি, ইলিশ মাছ, শাড়ি, মসলা ইত্যাদি। উপহার বিনিময়ের সময়ও চোখের জলে ভিজে ওঠে দুই দেশের মানুষের মুখ।সীমান্তের পূজা ও সম্প্রীতির প্রতীক: কালীপূজা উপলক্ষে প্রতি বছর ভারতের দরিবস এলাকায় শ্রীশ্রী মা বৃদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজাকেন্দ্রিক মেলাই দুই দেশের মানুষের মিলনস্থল। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই পূজা ও মেলা একসাথে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।এই পূজার বিশেষত্ব হলো— মন্দিরের পুরোহিত আসেন বাংলাদেশ থেকে, আর পূজারী ভারতের। দুই দেশের মানুষ একসাথে পূজা দেন, প্রসাদ খান, আর একদিনের জন্য হলেও ভুলে যান সীমান্তের বিভাজনরেখা।বাংলাদেশের পুরোহিত বিকাশ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত আসেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা হয়। এই মন্দির প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে দুই দেশের ভক্তদের মিলন মেলা।’ভারতের পূজারী জ্যোতিষ চন্দ্র রায় জানান, ‘পুরোহিত বাংলাদেশে, পূজারী ভারতে— এটাই সম্প্রীতির প্রতীক। দুই দেশের মানুষ মিলে এই মন্দির চালান, সহযোগিতাও দুই দেশ থেকেই আসে।’উৎসবের আমেজে সীমান্ত: মেলা ঘিরে দুই দেশের ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। মন্দির প্রাঙ্গণে বসে খাবার, খেলনা, শাড়ি ও গয়নার দোকান। সীমান্তের দুই পাশ থেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আসে মানুষ। তবে এসময় নিরাপত্তায় সতর্ক ছিল উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী— বিজিবি ও বিএসএফ।লালমনিরহাটের শ্রীমতী কাবেরী বলেন, ‘ত্রিশ বছর আগোত হামরা ভারতে চলি আসি। এ মেলায় হিন্দু-মুসলমান সবাই আসে। গরিব মানুষ ভিসা করতে পারি না, তাছাড়া এখন ভিসা বন্ধ থাকায় এই মেলাই একমাত্র দেখা করার সুযোগ হামার।’ভারতের দরিবস এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল মিয়া বলেন, ‘আমার অনেক আত্মীয় বাংলাদেশে আছে, আবার বাংলাদেশের অনেক আত্মীয় ভারতে। পাসপোর্ট-ভিসা না থাকলেও এই মেলায় এসে দেখা হয়, অশ্রুজলে ভিজে যায় বিদায়ের মুহূর্ত।’বিদায়ের অশ্রুতে ভাসে সীমান্ত: দিনভর এই মেলায় অংশ নেন প্রায় বিশ হাজারের বেশি ভক্ত ও দর্শনার্থী। সূর্যাস্তের আগেই শেষ হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। বিদায়ের সময় সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অশ্রুসিক্ত আবেগ ও আগামী বছরের প্রতীক্ষা।