• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ১২ই পৌষ ১৪৩২ রাত ০৯:২৩:৩৭ (26-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

ক্ষেতলালে পরিত্যক্ত চাতালে ২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ, অনিয়মের অভিযোগ

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে সরকারি মূল্যে চাল সংগ্রহ কার্যক্রমকে ঘিরে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ, মিল মালিক ও একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।অভিযোগ রয়েছে, কোনো ধরনের সরজমিন পরিদর্শন ছাড়াই সম্পূর্ণ অচল, বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন এবং অস্তিত্বহীন হাসকিং চাতাল ও অটো রাইচ মিলের নামে বিপুল পরিমাণ চাল সংগ্রহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা সরকারি নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আমন মৌসুমে ক্ষেতলাল উপজেলা খাদ্য গুদামে মিলারদের মাধ্যমে ২ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং কৃষক পর্যায়ে ১১১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।গত ২৪ নভেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা খাদ্য বিভাগ ৪১টি হাসকিং চাতাল ও ৪টি অটো রাইচ মিলকে সচল দেখিয়ে বরাদ্দ তালিকা প্রস্তুত করে।বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী ৪১টি হাসকিং চাতাল থেকে গড়ে ১১ দশমিক ৮২০ মেট্রিক টন করে সিদ্ধ চাল এবং ৪টি অটো রাইচ মিল থেকে মোট ১ হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের চুক্তি করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ৪১টি হাসকিং চাতালের একটিও বর্তমানে চালু নেই। অধিকাংশ চাতাল বহু বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও মিলের কোনো অস্তিত্বই নেই আবার কোথাও ঝোপঝাড়ে ঢাকা পরিত্যক্ত ভবন পড়ে আছে। অনেক চাতালে হাসকিং বয়লার তো দূরের কথা, বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত নেই। কোথাও আবার চাতালের জায়গায় খড়ের পালা রেখে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।একই চিত্র পাওয়া গেছে তালিকাভুক্ত অটো রাইচ মিলগুলোর ক্ষেত্রেও। চারটি অটো রাইচ মিলের মধ্যে মেসার্স চৌধুরী অটো রাইচ মিল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মিলটি ২০২২ সাল থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। অথচ এই অচল মিলের নামেও সরকারি খাদ্য গুদামে বিপুল পরিমাণ চাল সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মিল সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এসব বন্ধ ও অস্তিত্বহীন মিলের নাম ব্যবহার করে একটি শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট বাইরে থেকে নিম্নমানের চাল সংগ্রহ করে সরকারি গুদামে সরবরাহ করছে। এতে একদিকে সরকার যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে প্রকৃত সচল মিল ও সৎ ব্যবসায়ীরা বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খাদ্য গুদাম সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে, যার একটি বড় অংশের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।এদিকে উপজেলা খাদ্য অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামসর্বস্ব মিলের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, কোনো ধরনের সরজমিন পরিদর্শন ছাড়াই কীভাবে অচল ও বিদ্যুৎবিহীন মিলের নামে সরকারি চাল সংগ্রহের তালিকা প্রণয়ন করা হলো। এ ঘটনায় জেলা খাদ্য বিভাগ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ তদন্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।এ বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সওকত চৌধুরী বলেন, বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কোন মিল সচল আর কোনো মিল অচল, সেটি দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বলেও তিনি মন্তব্য করেন।ক্ষেতলাল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শামীমা আখতার অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন এবং সময় স্বল্পতার কারণে সরেজমিনে পরিদর্শন ছাড়াই তাকে বরাদ্দ তালিকা প্রস্তুত করতে হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সব নিয়ম মেনেই বরাদ্দ বণ্টন করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) শাকিল আহমেদ বলেন, আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে যে সব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। খাদ্য অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার জন্য মিল সচল থাকা, বৈধ লাইসেন্স ও বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা করে সরজমিন পরিদর্শন ছাড়া তালিকা প্রণয়ন করে থাকলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।