নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর ‘প্রত্যাশার ক্যানভাস’ চালু
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রচলিত ধাঁচের গণসংযোগ কর্মসূচিগুলো নেতা-কর্মীদের শোডাউনে পরিণত হওয়ায়, সরাসরি প্রার্থীর কাছে প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন খুব কম ভোটারই। তবে বোর্ডে উন্মুক্ত লেখনিতে বড় একটি জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়া সহজেই জেনে নিতে পারবেন প্রার্থী।একজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর কাছে ভোটারদের মতামত, ভাবনা, প্রত্যাশা, চাওয়া–পাওয়া জানতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে হোয়াইট বোর্ড স্থাপন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। রঙিন মার্কার পেনের মাধ্যমে প্রার্থীর কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছানোর জন্য অভিনব ‘প্রত্যাশার ক্যানভাস’ স্থাপন করেছেন তিনি।৩ ডিসেম্বর বুধবার নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা মেলে এই প্রত্যাশার ক্যানভাসের। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বিভিন্ন বয়সী ভোটাররা তাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার কথা লিখছেন নির্দ্বিধায়। বোর্ডের পাশে থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা সহযোগিতা করছেন তাদের। রাজনীতির প্রচলিত রীতির বাইরে এসে এমন উদ্যোগ দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন অনেকেই।ক্যানভাস জুড়ে উঠে এসেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট, মাদক, অপরিচ্ছন্নতা, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল, দূষণসহ নানাবিধ সমস্যার কথা। সেই সাথে এই শহরে শিক্ষার মান উন্নয়ন, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত, আইনের সঠিক প্রয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কথাও লিখেছেন নাগরিকরা। বোর্ডে মতামত লিখতে আসা অধিকাংশ ভোটারই তরুণ ও শিক্ষার্থী।নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ আগে দেখিনি। অনেকেই তো এমপি নির্বাচিত হতে চায়। তারা নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, আমরা কী চাই সেটা সরাসরি জানানোর সুযোগ থাকে না। এই বোর্ডের মাধ্যমে আমরা আমাদের কথাটা তুলে ধরতে পারছি।আরপি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, শহরের যানজট অনেক বড় সমস্যা। ইতঃপূর্বে অনেক জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিলেও সমাধান করতে পারেনি। ফুটপাত দখল, রাস্তায় পার্কিং, যানজটের কারণে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। এই বোর্ডে সেটাই লিখলাম, দেখি তিনি কতটা সমাধান করতে পারেন।নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে বাকি তিন প্রার্থী ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পেলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এবারই প্রথমবারের মত মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে এসে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি দৃষ্টি কেড়েছেন অনেকের।প্রচলিত ধাঁচের গণসংযোগ কর্মসূচিগুলো নেতা-কর্মীদের শোডাউনে পরিণত হওয়ায়, সরাসরি প্রার্থীর কাছে প্রত্যাশার কথা জানাতে পারেন খুব কম ভোটারই। তবে বোর্ডে উন্মুক্ত লেখনিতে বড় একটি জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়া সহজেই জেনে নিতে পারবেন প্রার্থী।ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের বিষয়ে এমপি পদপ্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ টিবিএস'কে বলেন, আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়া ব্যক্তিরা ভোটারদের কাছে গিয়ে নানান প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু, তাতে সকলের মতামত জানার সুযোগ থাকে না। যারা ভোটার তাদের অধিকাংশের মতামত জানার জন্যেই এই 'প্রত্যাশার ক্যানভাস' বসানো হয়েছে। আমরা ৭ দিনব্যাপী এই ক্যানভাস চালু রাখব। শুধু চাষাঢ়া শহীদ মিনারেই নয়, নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের পাঁচটি স্থানে এই বোর্ড বসানো হয়েছে।তিনি বলেন, ৭ দিনব্যাপী সকলের মতামত নেয়ার পর আমরা একটি সারমর্ম তৈরি করব। যেমন যানজট থেকে মুক্তি চায় কতজন ভোটার। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছেন কতজন। কতজন এই শহরে দখল দূষণের কথা তুলে ধরেছেন। সেগুলো মার্কিং করে একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরবো। আমি যেহেতু আমার ভোটারদের চাহিদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তাই তাদের চাহিদাগুলো সঠিকভাবে জেনে নিতে চাই।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক আশু আশরাফুল বলেন, আমাদের নির্বাচনী কালচার হচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড স্থাপন করে পুরো নির্বাচনী এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়া। এছাড়া শোডাউন, মিছিল, গণসংযোগ করে থাকে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৌঁছাতেই এসব করে থাকে। তবে ব্যতিক্রমী উপায়েও যে ভোটারদের কাছে পৌঁছানো যায় এবং ভোটারদের প্রত্যাশা জেনে নেয়ার ব্যতিক্রমী উদাহরণ এই হোয়াইট বোর্ড। নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ না কেউ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হবেই। প্রার্থী যদি আন্তরিকভাবে তার এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করে এবং নির্বাচিত হবার পর সমাধানের উদ্যোগ নেয়, তাহলে তা সমাজের জন্যেই মঙ্গলজনক।