• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ভোর ০৪:২০:২৭ (05-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে চলছে সড়ক নির্মাণের কাজ

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাইয়ে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত ও সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে রাতের আঁধারে কাজ করছেন। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দিনের পরিবর্তে রাতে কাজ করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমন অনিয়মের ঘটনা উপজেলার পুনট-মোসলেমগঞ্জ রাস্তায় ঘটেছে। তবে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, রাতের কাজ করার বিষয়টি জানা নেই। তবে তদন্ত করে দেখা হবে।রাতে ঠিকাদারের লোকজন কাজ করছেন স্থানীয়দের এমন অভিযোগ পেয়ে রাতে সরেজমিনে ওই রাস্তায় গিয়ে নিম্নমানের খোয়া, রাবিশ, মাটি ও পরিত্যাক্ত পাথর-পিচ বিছানোর দৃশ্য নজরে পড়েছে। এসময় দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী অফিসের কাউতে দেখা যায়নি।স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার ও প্রশস্ত করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই নিম্নমানের ইট ব্যবহার করছেন। রাস্তাটি চওড়ায় আগে ছিল ৫ মিটার, বর্তমানে তা বেড়ে হচ্ছে ৮.৭ মিটার। পুরো রাস্তার একপাশে খনন করা হয়েছে। গর্তে বালির সাথে ইটের খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে পূর্বের রাস্তার উপরানো পরিত্যাক্ত পাথর, ইট ভাঙ্গার গুড়া (রাবিশ) ও মাটি। ঠিকাদারের লোকজন এভাবেই রাতের আঁধারে দায়সারা কাজ করছেন। সেখানে দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীকেও দেখা যায় না। নিম্নমানের কাজ করায় এলাকাবাসী বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন তাদের ওপর চড়াও হয়। এমনকি হুমকিও দেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রাস্তাটির সংস্কার ও প্রশস্তকরণের কাজ তদারকির অনুরোধ করেন তারা।উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পুনট-মোসলেমগঞ্জ রাস্তার শান্তিনগর বাজার থেকে মোসলেমগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৭.৩৮ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার এবং একই রাস্তার একপাশে চওড়া করতে নতুন ভাবে ৩.৭ মিটার প্রশস্তকরণে গত বছরের ৩ জুন দরপত্র আহবান করা হয়। আর এই কাজে ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৩৫ লাখ ১৯৪ টাকা। সে অনুযায়ী কাজটির দায়িত্ব পান নওগাঁর ইথেন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজটি চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি অনেক দেরিতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে অনেক অনিয়মের চিত্র দৃশ্যমান হয়েছে।  প্রশস্তকরণের গর্তে পরিত্যাক্ত পাথর, বালুর পরিবর্তে মাটি ও রাবিশ দিয়ে রাতে ভরাট করছেন এমন প্রশ্নে ইথেন এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক নুর আলম বলেন, যেহেতু কৃষি এলাকা, কৃষকের কাজে বাধা না সৃষ্টি করতে রাতে কাজ করা হচ্ছে। রাস্তার উপরানো পরিত্যাক্ত পাথর দু-একটি যেতেই পারে। তবে পুরোটা এসব দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে না, আপনার কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আসলে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাস্তার কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক বলেন, ‘নতুন করে যে পরিমাণ রাস্তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে, তাতে উপরানো পাথর ও গর্ত খোঁড়া মাটি দিয়ে সমান করা হচ্ছে। যেখানে বেশি লাগছে সেখানে অন্য জায়গা থেকে এনে সমান করা হচ্ছে। আসলে আমাদেরকে যেভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে সেভাবেই করছি।’স্থানীয় থল গ্রামের বাসিন্দা রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘তিন নম্বর ইট দিয়ে কাজ করলেও ভালো ছিল। যেখানে পরিত্যাক্ত পাথর, রাবিশ ও মাটি দিয়ে কাজ করছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। আমরা কিছু বলতে গেলে ধমক দেয়। ছয় মাস না যেতেই রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাবে, রাস্তা ফেটে যাবে। দুই বছর আগেও এই রাস্তার কাজ করেছে, আবার এই বছর করছে। বারবার রাস্তা সংস্কারের নামে সরকারের টাকা লোপাট করার পরিকল্পনা করছে ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ার।কাজের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আবু জাফর বলেন, প্রথমত রাতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমার অনুপস্থিতিতে কাজ করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। আর পরিত্যাক্ত পাথর ও রাবিশ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। যদি তারা এসব ব্যবহার করে তাহলে পুনরায় উঠানো হবে।  ঠিকাদার রাসেল আহম্মেদ বলেন, আমিতো আসলে সাইটে থাকি না। যদি আমার লোকজন পরিত্যাক্ত পাথর, রাবিশ ও মাটি দিয়ে বক্স ভরাট করে তা অবশ্যই তুলে ফেলা হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ২ ডিসেম্বর কাজের মেয়াদ শেষ হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে।  উপজেলা প্রকৌশলী সুমন কুমার দেবনাথ বলেন, এ বিষয়ে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়ম প্রমান পেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল পাবে না। তাড়াহুড়া করে কাজ করলেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে।