• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ০৯:২৯:৫৫ (09-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ০৯:২৯:৫৫ (09-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

শখের বশে রঙিন ফুলকপি চাষ, বাজিমাত করলেন হেলাল

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন স্থানীয় যুবক হেলাল উদ্দিন (২৮)। উপজেলার প্রথম রঙিন ফুলকপি চাষী হিসেবে আশপাশের গ্রামে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষের খবরে ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন এসব গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষকরা। অনেকে ক্ষেত থেকেই কিনে নিচ্ছেন রঙিন ফুলকপি। নতুন এই ফসলের দাম বেশি হলেও চাহিদার কোনো কমতি নেই।উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড পশ্চিম সরফভাটা গ্রামের নবীর হোসেনের ছেলে হেলাল।কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রথমবারের মতো শীত মৌসুমে একমাত্র হেলাল রঙিন ফুলকপির চাষ শুরু করেন। কৃষি কার্যালয় থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। সাদা রঙের ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির বাজার মূল্য বেশি। তাই এই চাষী সফলতা কুড়িয়েছেন।রাঙ্গুনিয়ার একমাত্র রঙিন ফুলকপি চাষী জানান, গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে রঙিন বীজ সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। ১ হাজার ৫০০ রঙিন ফুলকপির বীজের মধ্যে ১ হাজার হলুদ ও ৫০০ বেগুনি রঙের।অনলাইনে রঙিন ফুলকপির সম্ভাবনা দেখে এটি চাষে উদ্বুদ্ধ হন জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ ১০ বছর আগে পড়াশুনার পাশাপাশি কৃষক বাবাকে সহযোগিতা করতে গিয়ে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ি। চট্টগ্রাম নগরের একটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে বেসরকারি একটি হাসপাতালে চাকরি শুরু করি। এর পাশাপাশি সবজি চাষ আমার নেশা হয়ে উঠতে থাকে। কয়েক বছর ধরে নিজেদের জমিতে মরিচ, টমেটোসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজি চাষ করলেও এ বছর রঙিন ফুলকপি চাষের সিদ্ধান্ত নিই।’তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ির ছাদে ট্রেতে বীজগুলো রোপণ করি। চারা গজানোর পর রোপনের উপযোগী হওয়ায় বাড়ির পাশে কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন মওলার চরে ১০ শতাংশ জমিতে রঙিন কপির চারা রোপণ করি। পাশের জমিতে আরও ৪০ শতাংশ জমিতে মরিচ, টমেটো, বরবটি ও বাঁধাকপি চাষ করেছি। কীটনাশক কম ব্যবহার করার জন্য পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেছি। প্রায় ৮০ দিনে কপি পরিপক্ক হয়েছে। গত ১ সপ্তাহে ক্ষেত থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করি। ক্ষেতে পাইকারি ৮০ টাকা কেজিতে রঙিন ফুলকপি বিক্রি করছি। বীজ সংগ্রহ থেকে ফুলকপি পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’এখন আরও প্রায় দেড় লাখ টাকার রঙিন ফুলকপি বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন হেলাল। তিনি বলেন, ‘চাকরির কর্তব্য পালন করতে হয় রাতে। সেজন্য চাষাবাদে দিনের বেলায় যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছি। দিনের বেলায় ডিউটি থাকলেও সময় যেটুকু পেয়েছি গত ৩ মাসে ক্ষেতেই পুরো সময় ব্যয় করেছি।’হেলালের শুধু সবজি ক্ষেত নয়, বাড়ির পাশের গরুর খামার আছে। এছাড়া ৩ বছর ধরে অনলাইনে মরিচ, হলুদের গুড়াও বিক্রি করেন হেলাল। নিজের ক্ষেতের মরিচ নিজে শুকিয়ে গুঁড়া করে প্যাকেটজাত করে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারে গ্রাহকের কাছে পাঠিয়ে দেন। জানা গেছে, বছরে লাখ টাকার ওপরে মরিচ ও মসলা বিক্রি হয় তার।সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষেত থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি তুলছেন চাষী হেলাল। রঙিন ফুলকপি ক্ষেত দেখতে পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসছেন। কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন। অনেকে বাগান থেকেই কপি কিনে নিচ্ছেন।সবজি ক্ষেত দেখতে আসা পাশের গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম (৬২) বলেন, ‘হেলালের ক্ষেতে প্রথম রঙিন ফুলকপি দেখলাম। আমারও রঙিন ফুলকপি চাষের ইচ্ছা আছে। এ জন্য সামনাসামনি দেখতে এসেছি। ফুলকপিগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে।’উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে ছালমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রঙিন ফুলকপি চাষের বিষয়টি নতুন হওয়ায় আশপাশের গ্রামের লোকজন প্রতিদিন ক্ষেত দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এমনকি কৃষি বিভাগের উপজেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও ক্ষেতটি পরিদর্শন করে গেছেন।’উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘উপজেলায় একমাত্র রঙিন ফুলকপি চাষী হেলালকে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি সফল হওয়ায় আগামী বছর রঙিন ফুলকপির চাষির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নতুন জাতের ফুলকপি বলেই ক্রেতারা এটি কিনতে চাইছেন। দাম একটু বেশি হলেও রঙিন ফুলকপির চাহিদা অনেক বেশি। সেই সঙ্গে রঙিন ফুলকপি পুষ্টিকর ও খেতেও সুস্বাদু।’