কসবা-আখাউড়ায় মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা–আখাউড়া) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ৯০ বছর বয়সী মুশফিকুর রহমানকে ঘিরে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রায় ১৭ বছর পর কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসা এই প্রবাসী নেতার মনোনয়ন স্থানীয় রাজনীতিতে বিস্ময়, হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারসহ তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ-এলাকার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ আলমের কাছে বিপুল ভোটে পরাজয়ের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনীত করলেও মনোনয়নপত্রে ইচ্ছাকৃত ভুল করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। সে সময় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তাঁর আঁতাতের অভিযোগ ওঠে, যা আজও স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনায় রয়ে গেছে। অভিযোগের কোনোটিই তিনি প্রকাশ্যে অস্বীকার বা ব্যাখ্যা করেননি।২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই হঠাৎ তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন কৌশলে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন এবং প্রাথমিক মনোনয়নকে অনেকেই ‘সিন্ডিকেটের খেলা’ ও ‘অস্বাভাবিক প্রভাবের ফল’ হিসেবে দেখছেন।এলাকার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রধানত তাঁর বয়স ও শারীরিক অক্ষমতা ঘিরে। ৯০ বছর বয়সী এই নেতা নিজে নিজে হাঁটতেও অন্যের সহায়তা নেন বলে স্থানীয়দের দাবি। কিছু সময় অসংলগ্নভাবে কথা বলায় তাঁর নেতৃত্বদানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফলে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাঁকে মনোনীত করা-এলাকাজুড়ে হাস্যরস ও তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।নেতা–কর্মীদের ক্ষোভের আরও বড় কারণ-দলের পরীক্ষিত নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা। বিগত কঠিন সময়ে কসবা–আখাউড়ার রাজপথে যিনি নেতা–কর্মীদের পাশে ছিলেন, সেই কবীর আহমেদ ভূইয়াকে বিবেচনায় না রেখে দীর্ঘদিন এলাকা–বিচ্ছিন্ন একজন প্রবীণ প্রবাসীকে মনোনয়ন দেওয়াকে অনেকেই ‘অন্যায়’ এবং ‘অপমান’ হিসেবে দেখছেন। এসব ক্ষোভ থেকেই সম্প্রতি হাজার হাজার নেতা–কর্মী ‘কাফনের কাপড়’ পরে কসবা এবং আখাউড়ায় গণমিছিল বের করেন, যা জাতীয় পর্যায়েও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।বিগত সময়ে মুশফিকুর রহমানকে ঘিরে নানা বিতর্কও রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ বর্তমানে ২৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় কারাগারে আছেন। এমপি থাকাকালে ১০% কমিশন নেওয়া, ‘দেশ টিভি’ অবৈধভাবে বিক্রি, দলীয় প্রয়োজনে কখনো না এসে ব্যক্তিগত স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা-এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি তিনি কসবা-আখাউড়ার কোথাও ভোটার নন বলেও জানা গেছে।এলাকার রাজনীতিতে এখন নতুন করে একটি অভিযোগ জোরালো হয়েছে-৫ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নাকি কসবা-আখাউড়ার রাজনীতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই মনোনয়নের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই সিন্ডিকেট সাড়ে ছয় লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও অনেকেই মনে করছেন-দলের উচিত এই আসনটি পুনর্বিবেচনা করা। নইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনটি হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।