• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:০৪:২৮ (15-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • বুধবার ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ১২:০৪:২৮ (15-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

জীবনের দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম-হতাশা আর তিন কিশোর চোরের মানবিক কাহিনি ‘ভৃগুভূমে হিমালয়’

নিরূপ সাহা: ‘ভৃগুভূমে হিমালয়’ ড. মোহাম্মদ আমীনের একটি উপন্যাস। উপন্যাস লেখায় তাঁর রয়েছে নিজস্ব ঢং। বাস্তবতার নিরিখের তার রচিত উপন্যাসসমূহ ইতোমধ্যে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভৃগুভূমে হিমালয় অনুরূপ একটি উপন্যাস। প্রকাশক মাদার্স পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা। এই উপন্যাস থেকে পাঠক জানতে পারবেন, যত বাধাবিঘ্ন বা বিপর্যয়ই আসুক না কেন, যত অবহেলাই ঘটকু না কেন, উদ্যম, বুদ্ধিমত্তা ও সততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের সামষ্টিক সহযোগিতা এবং কার্যকর সমন্বয় ঘটানো গেলে কোনো কিছু অপরাজেয় থাকে না।পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য যে-কোনো পর্যায়ে হোক না কেন, অবহেলা বা অবমূল্যায়ন জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। বিশেষ করে, তিল তিল কষ্টের সপ্নিল প্রত্যাশায় গড়ে তোলা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অশ্রদ্ধা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অকৃতজ্ঞতা ও অবহেলা চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। জীবন হয়ে যায় অবর্ণনীয় কষ্টের ভয়ানক প্রহর। অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণায় অনেকে উন্মাদ হয়ে যায়। এমন দুঃসহ অবস্থায় সামান্য সহানুভূতিও হয়ে যায় অসামান্য। এ সামান্য সহানুভূতিকে বৌদ্ধিক বিবেচনায় গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে কীভাবে অবহেলা আর অবমূল্যায়নকে প্রেরণায় পরিণত করে জীবনকে সৃষ্টির উল্লাস আর ঐশ্বর্যের অনুপমতায় ভরা অসীম সমৃদ্ধের হিমালয় করে তোলা যায় তা এই উপন্যাসের পরম্পরা কাহিনির মূল বিষয়।নায়কের নাম আজগর সাহেব। তিনি সরকারের একজন প্রভাবশালী সচিব। কাজকর্ম ও চালচলনে ভদ্রলোক আগাগোড়া গাণিতিক আর পুরোপুরি নিখাদ। মানুষটির জীবন ছিল অফিস-বাসা আর সংসারজীবনকে ঘিরে আবর্তিত একটি সৌম্য অধ্যায়। সংসার ছিল সমুদয় ভালোবাসার অফুরান প্রেরণা। কিন্তু কারণে-অকারণে স্ত্রী-সন্তানদের চরম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর কদর্য আচরণের শিকার হয়ে ক্রমান্বয়ে কর্ম আর সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠতে থাকেন। এককালের অতি প্রিয় বাসা নামের ভালোবাসার আলয়টিও হয়ে যায় মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়েও ভয়াবহ গহ্বর। সংসারপ্রেমী আজগর সাহেব অফিস ছুটি হওয়া মাত্র বাসায় চলে আসতেন। এখন বাসার কথা মনে পড়লে ভয়ে শরীরমন আঁতকে উঠে। বাসায় ফেরার পরিবর্তে একদণ্ড শান্তির অন্বেষায় পার্কের নির্জন এলাকায় একটি পরিত্যক্ত টুলে গভীর রাত অবধি একাকি সময় কাটাতে শুরু করেন।একদিন অসুস্থ আজগর সাহেব পরিত্যক্ত টুলে ঘুমের মধ্যে বেহুঁশ হয়ে যান।  আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বইছে ঝড়ো হাওয়া। তাঁর হুঁশ নেই। তিন কিশোর টোকাই পার্কে ঘুরতে এসে পরিত্যক্ত টুলে এক লোককে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে আসে। বুঝতে পারে লোকটি বেহুঁশ। সুযোগ বুঝে তারা পরিধেয় ছাড়া অচেতন আজগর সাহেবের সবকিছু চুরি করে ধরা পড়ার ভয়ে পার্ক থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়।চুরির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ঝড়বৃষ্টি শুরুর আশঙ্কা অতি সন্নিকট হয়ে আসে। তিন টোকাই বুঝতে পারে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে টুলে শুয়ে থাকলে অচেতন লোকটি মারা যাবে। পার্কে ছুটে আসে তিন চোর-টোকাই। তারা আজগর সাহেবকে কাঁধে চড়িয়ে হাসপাতাল নিয়ে যায়। ততক্ষণে সামান্য চেতনা ফিরে আসে আজগর সাহেবের। অবচেতন আজগর সাহেব তিন টোকাইর কথোপকথন থেকে চুরি আর চোর সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি অবাক হয়ে যান, চুরি করার পরও তিন কিশোর মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে।ঘটনাটি আজগর সাহেবের মনে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বিরল। তিন চোর-কিশোরের সহানুভূতিতে তিনি বিস্মিত হয়ে যান। তাদের এই কাজকে মনে হলো তাঁর জীবনে ঘটা আর দেখা শ্রেষ্ঠ কর্ম। তিন টোকাইকে মনে হলো পৃথিবীতে তাঁর দেখা শ্রেষ্ঠ মানব সন্তান। তারা ফিরে না এলে হয়তো তিনি মারাই যেতেন।সুস্থ হয়ে আজগর সাহেব তিন টোকাইকে সহায়তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সমন্বিত করে কীভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পপতি আর বিশ্বখ্যাত করে দিলেন তা এই উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে।