নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ সন্ধ্যা ৭টায়; কিন্তু ম্যাচ শুরুর ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আগেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামমুখি জনতার ঢল নামে। স্টেডিয়ামের চারপাশে প্রবেশপথগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করে।
বাফুফের ঘোষণা ছিল বেলা দুইটায় দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হবে স্টেডিয়ামের গেট। তার আগেই হাজার হাজার দর্শক মিছিল করে হাজির হতে থাকে স্টেডিয়াম এলাকায়। দুপুর ২টার মধ্যেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের চারপাশে ভিড় তৈরি হয়। স্টেডিয়ামে প্রবেশের জন্য দর্শকরা জমায়েত হয় নির্ধারিত গেটের সামনে। আধাঘণ্টা পর দুপুর আড়াইটায় দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয় গেট।
সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল স্টেডিয়ামের ৩ ও ৪ নম্বর গেটের সামনে। বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মূল সড়কে দাঁড়িয়ে ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে।
বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে আলোচিত দেশের ফুটবলের এই সমর্থক সংগঠনটি। তারা বেশ কয়েকদিন বাফুফে ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করেছে টিকিটের দাবিতে। সারা বছর ফুটবলকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া এই সংগঠনটি প্রত্যাশানুযায়ী টিকিট পায়নি বাফুফের কাছ থেকে।
গেট খুলে দেওয়ার পরই দর্শকরা ঢুকতে থাকে গ্যালারিতে। এক ঘণ্টার মধ্যেই গ্যালারির আসনের অর্ধেক পূর্ণ করে ফেলেন তারা। প্রখর রোদে গ্যালারিতে বসে অপেক্ষা ম্যাচের। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটি।
দর্শকদের অনেকের হাতে লাল-সবুজ পতাকা। মাথায় পতাকা বাধা এবং হাতে বাংলাদেশ লেখা প্লেকার্ড। অনেকে হামজা ও শামিত সোমের নামে প্লেকার্ড ধরেছিলেন হাতে। একজন তো হামজা, শামিত ও ফাহামিদুলকে নিয়ে কবিতা লিখে এনেছেন 'হামজা-শামিত-ফাহামিদুল, গোল দিতে করিও না ভুল।'
বাংলাদেশের এই ম্যাচটি ঘিরে দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহ। একটা সময় ফুটবলকে ঘিরে এমন উন্মাদনা লক্ষ্য করা যেতো ৮০-৯০ এর দশকে। আবাহনী-মোহামেডানের ফুটবল দ্বৈরথ দেখার জন্য দুপুরের মধ্যেই স্টেডিয়ামের গ্যালারি পূর্ণ হয়ে যেতো। দর্শকদের মধ্যে দেখা যেতো তুমুল উত্তেজনা।
জাতীয় ফুটবল দলের খেলা নিয়ে এতটা আগ্রহ সর্বশেষ দেখা গেছে ২০০৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময়। যেবার ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রায় দুইটি যুগ কেটে গেছে, বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ-উম্মাদনা কমতে থাকে। কারণ, আগ্রহ তৈরি করার মত তো তেমন কোনো ফুটবলারই ছিল না।
এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা হামজা চৌধুরি এলেন। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এর আগে এতবড় তারকার আগমণ ঘটেনি। ভবিষ্যতেও ঘটবে কি না সন্দেহ। দেশের ফুটবলে জোয়ার তৈরির মূল কেন্দ্রবিন্দুই হলেন হামজা চৌধুরী। সঙ্গে যুক্ত হলেন এক সময় কানাডা জাতীয় দলের হয়ে খেলা শামিত সোম, ইতালি প্রবাসি ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলাম।
ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে হামজার অভিষেক হলো। তখন থেকেই তাকে নিয়ে তুমুল আগ্রহ দর্শকদের মধ্যে। এরপর তিনি দেশের মাটিতে খেলবেন, সঙ্গে শামিত সোম, ফাহামিদুল ইসলাম- দর্শকরা এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়বেন কেন! ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচের সময়ই দেখা গেছে দর্শকদের মধ্যে তুমুল আগ্রহের বিষয়টি।
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচটি নিয়ে আরও বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে, কারণ প্রতিপক্ষ শক্তিশালী। এটা এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ এবং এই ম্যাচেই একসঙ্গে খেলবেন হামজা, ফাহামিদুল এবং শামিত সোম। যে কারণে অনলাইনে টিকিট বিক্রির সময় থেকে দেখা গেছে দর্শকদের তুমুল আগ্রহ।
বাফুফে এই ম্যাচের জন্য ছেড়েছিল ১৮৩০০ টিকিট। টিকিট বিক্রি করা ওয়েবসাইটে মুহূর্তের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লক্ষাধিক দর্শক। ফলে মুহূর্তের মধ্যে দেখা যায় টিকিট সোল্ড আউট। এর মধ্যে যারা টিকিট কাটতে পেরেছেন, তারা চরম সৌভাগ্যবান।
গুলিস্তান, রাজউক এবং দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শুরু করে স্টেডিয়ামের চারপাশে আজ ফুটবলপ্রেমী জনতার স্রোত। গায়ে বাংলাদেশের জার্সি, মাথায় লাল-সবুজের পতাকা বেধে, হাতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দর্শকরা হাজির হয়েছে স্টেডিয়াম চত্বরে।
এমন ফুটবল পাগল দর্শকদের কি একটি কাঙ্খিত জয় উপহার দিতে পারবেন হামজা চৌধুরী, শামিত সোমরা?
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available