নড়াইল প্রতিনিধি: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর থেকে নড়াইলের দুটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নড়াইল-১ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেতে এ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে মাঠ গরম করলেও তারা একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। নিয়মিত গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশ, পথসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। অথচ বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা এখনও মনোনয়ন যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছেন।
নড়াইল-১ আসনে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫১ জন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে বেশিরভাগ সময় এই আসন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দখলে ছিলো। ১৯৭৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আবুল বাসার সিকদার। ১৯৮৬ সালে এই আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির এসএম আবু সায়ীদ। এরপর ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাধ সাহা, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম টিপু, ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা, ২০০২ সালের উপনির্বাচনে বিএনপি হতে ধীরেন্দ্র নাথ সাহা, ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএম কবিরুল হক মুক্তি। সবশেষ ২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ সালে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগের বিএম কবিরুল হক মুক্তি বিজয়ী হন।
আওয়ামী শাসন আমলের বিগত সংসদ নির্বাচনগুলোতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই এসব নির্বাচনে জনগণের সঠিক মতামত প্রতিফলিত হয়নি।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী এই আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ও নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সারকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী ঘোষণা করেছেন মাওলানা আব্দুল আজিজকে। গণ অধিকার পরিষদের মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন খুলনা মহানগর গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান হোসেন রিজু। জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী পাচগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান এসএম সাইফুজ্জামান প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান এসএম সাইফুজ্জামান এনসিপির নড়াইল জেলার মুখপাত্র হিসেবে ইতোমধ্যে বেশ পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী নড়াইল জেলা শাখার সেক্রেটারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার জানান, দল থেকে তিনি প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকার সকল ভোটকেন্দ্র, প্রতিটি বাজারের ব্যবসায়ী ও গ্রামের লোকজনের সাথে মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক করেছেন। দীর্ঘকাল আগে থেকেই ওই জনপদের মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান সময়ে ওই এলাকার মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে তাতে তিনি বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
বিএনপি থেকে আধা ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক নাগিব হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত বাংলাদেশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ।
নির্বাচন সামনে রেখে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে লবিং গ্রুপিং। কেউ কেউ মনে করছেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি প্রয়াত বিএম বাকির হোসেনের আত্মত্যাগের কথা বিবেচনা করে তার সহোদর অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
অধ্যাপক বিএম নাগিব হোসেন দাবি করেন, এলাকার অধিকাংশ নেতাকর্মী তার সাথে আছেন। সে হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
এসব প্রার্থীর মধ্যে প্রচার প্রচারণায় ও সাংগঠনিক দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম।
কালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান মিলু বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘকাল ধরে জেলা বিএনপির সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অসংখ্য হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। তার বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্যবার হামলা ভাঙচুর হয়েছে। বিগত ১৭ বছর ছিলেন চরম নির্যাতিত। এতকিছুর মধ্য দিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে রয়েছেন। সে হিসেবে এ আসনে তাকেই মনোনয়ন দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আর যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা এলাকায় থাকে না। অচেনা অজানা কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীদের মন ভেঙে যাবে। এতে করে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা কঠিন হবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘজীবন বিএনপির রাজনীতির সাথে আছি। তারুণ্যের অহংকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছি। বাকি জীবন এই দলের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করব।
তবে নিজের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন আসলে অনেকেই দলের পরিচয় নিয়ে এগিয়ে আসেন। নির্বাচন চলে গেলে এলাকার মানুষ ও দলের মানুষ আর তাদের চেহারা দেখতে পায় না।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available