পঞ্চগড় প্রতিনিধি: দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফার্মাসিস্ট জিল্লুর রহমান ও ওয়ার্ড ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স শিল্পী খাতুনের নানা অনিয়ম আড়াল করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে। ২৭ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও দুদক কার্যালয়ের একটি টিম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করলে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য সামনে আসে।

অভিযানের পর দুদকের আপত্তির ভিত্তিতে ৩০ নভেম্বর ফার্মাসিস্ট জিল্লুর রহমান ও ওয়ার্ড ইনচার্জ শিল্পী খাতুনকে শোকজ করেন ডা. সুমন ধর। তবে অভিযান চলাকালীন বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানানো হয়নি। অভিযোগ ওঠে—আসামিদের অনিয়ম আড়াল করতে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা সচেষ্ট। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।


১০ ডিসেম্বর সাংবাদিকরা শোকজ ও জবাবের অনুলিপি চাইলে ডা. সুমন ধর জানান, “অভিযোগ গুরুতর নয়—অনুলিপি প্রদান করা যাবে না।” এ সময় আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু নোমান মো. ইফতেখারুল তৌহিদও উপস্থিত ছিলেন। পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি সূত্র থেকে অভিযানের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
দুদকের টিম আন্তঃবিভাগের সাব-স্টোরে ওষুধ মজুদ ও সরবরাহ রেজিস্টারের সঙ্গে বাস্তব হিসাবের বড় ধরনের অমিল খুঁজে পায়। Diclofenac: রেজিস্টারে ১২৫টি, বাস্তবে পাওয়া গেছে ৩০০টি; Sulbutamol: রেজিস্টারে ১৪৭টি, বাস্তবে ২৭৯টি; Normal Saline: রেজিস্টারে নেই, বাস্তবে পাওয়া গেছে ২০টি; DNS Saline: রেজিস্টারে ২১টি, বাস্তবে ৮৭টি; Anadol: রেজিস্টারে ৫৫টি, বাস্তবে ৭টি; Cefuroxim: রেজিস্টারে মজুদ নেই, বাস্তবে ৯০টি (তবুও ২০০টির নতুন চাহিদা দেওয়া হয়েছে); Tiemoniun: রেজিস্টারে ১১১৯টি, বাস্তবে ১৫০০টি।
বহিঃবিভাগের সাব-স্টোরে ওষুধ সরবরাহ, বিতরণ ও শর্ট স্লিপ সংরক্ষণে বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ২০ অক্টোবর Cephradine (500mg): রেজিস্টারে ২৬০টি বিতরণ দেখানো হলেও স্লিপ অনুযায়ী বিতরণ হয়েছে মাত্র ৩০টি।
দুদক টিমের সদস্যরা এই অনিয়মকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। দুদকের সহকারী পরিচালক ইমরান হোসেন জানান, ‘স্টোরে ওষুধ থাকলেও রেজিস্টারে নেই দেখানো হয়েছে। রোগীরা ওষুধ কিনে ব্যবহার করছেন। আমরা আশঙ্কা করছি, এই ওষুধ বাইরে সরবরাহের জন্য মজুদ রাখা হয়েছিল। সুযোগ পেলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হতো।’
অভিযোগ রয়েছে, ওয়ার্ড ইনচার্জ শিল্পী খাতুনের স্বামী আতাউর রহমানের মালিকানাধীন মায়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা হতে পারে। বিপুল পরিমাণ ওষুধ স্টোরে রেখে কৃত্রিম সংকট দেখানোর পেছনে এটিই একটি সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করছে দুদক।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available