স্টাফ রিপোর্টার : শরীয়তপুরের সখিপুর থানার মাদ্রাসা ছাত্রী ছয় বছরের শিশু তায়েবাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবিতে ঢাকাস্থ সখিপুর থানার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৩ অক্টোবর শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর পারিবারিক কলহের জেরে আপন চাচী আয়েশা খাতুন শিশু তায়েবাকে হত্যা করে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখে। নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে এলাকাবাসীর অভিযানে শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। হত্যার ঘটনায় প্রত্যক্ষ সাক্ষীর জবানবন্দিতেও একই তথ্য উঠে এসেছে।
কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। তাদের মতে, পুলিশ প্রথম থেকেই গাফিলতি দেখিয়েছে এবং প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে প্রধান আসামিকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ এনে বক্তারা বলেন, নিখোঁজের পর তায়েবার বাবা থানায় জিডি করলেও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যদি উদ্যোগ নিতো, শিশুটিকে হয়তো জীবিত উদ্ধার করা যেত। প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের পর আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে প্রায় ৪৭ ঘণ্টা বিলম্ব করা হয়, যা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার, মামলার সাক্ষী ও বিচার দাবি করা স্থানীয়দের আসামি পক্ষের লোকজন নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে, অথচ পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হত্যাস্থল চিহ্নিতকরণ, আলামত সংগ্রহ, মোবাইল কল রেকর্ড যাচাই ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় গড়িমসি চলছে। থানার ওসি ও জেলা পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা ও মূল আসামিকে আড়াল করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
১ অক্টোবর জেলা পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনেও হত্যার স্থান, আসামিদের জবানবন্দি, রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত সংগ্রহ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা কয়েকটি নির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করে বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক তথ্য উদঘাটনে দ্রুত উচ্চতর তদন্ত টিম গঠন এবং মামলাটি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে হবে। প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করে দ্রুত রিমান্ডে এনে হত্যার নেপথ্যের সকল দোষীকে চিহ্নিত করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবার ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মামলার কার্যক্রম থেকে সখিপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। প্রভাবশালীদের প্রভাব খাটানো বন্ধ করে আইন অনুযায়ী আলামত সংগ্রহ ও তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা।
বক্তারা বলেন, একটি নিষ্পাপ শিশুর হত্যার পরও যদি বিচারের কার্যকর অগ্রগতি না হয়, তবে সাধারণ মানুষ আইন ও বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। এ সময় তারা ঘোষণা দেন, মানববন্ধনের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, প্রধান বিচারপতি, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা জেলা পুলিশ রেঞ্জ, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
মানববন্ধনে নিহত তায়েবার পিতা টিটু সরদার মা ডলি বেগমসহ থানার সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available