স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিউজ্জামান কৌশিকের (১৯) মৃত্যু ঘিরে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। মৃতের পরিবারের দাবি, মরদেহ ঝুলানোর অবস্থান, গলায় দুটো গামছা পেঁচানো ও শরীরের বিশেষ অঙ্গে আঘাতের চিহ্নসহ সার্বিকদিক বিবেচনায় এটি নিছক হত্যাকাণ্ড। সন্দেহের তীর পাশের রুমের নারীসহ চারজনের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে হত্যা মামলা করতে চাইলেও পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছে। তবে, পুলিশ বলছে- প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিহতের বাবা মো. কামরুজ্জামান দাবি করে বলেন, যে বাসায় সাবলেট থাকত কৌশিক সে বাসার ফাতেমা (৩০) নামের এক নারী ও তার ছোটবোনসহ আরো তিন চার জন এই হত্যাকাণ্ডে সাথে জড়িত ছিল। কারণ ফাতেমার স্বামী প্রবাসী। এখানে থাকেন না, ফলে তার বাসায় অনেকের যাতায়াত ছিল। সে এসবের গোপন কোনো কিছু দেখে ফেলায় এবং তার স্বামীকে বলে দিতে পারে এই সন্দেহের ভয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদিকে, ফাতেমাকে পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে বলে জানা গেছে, যদি ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়া যায়, তাহলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজনদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত ১০ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁও থানার মনিপুরী পাড়ার ১নং গলির ইফসুফ আলীর বাড়ির চতুর্থতলার একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী কৌশিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর তেজগাঁও থানার এসআই মাহমুদুল হাসান সুরতাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পাঠায়। কৌশিক কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের ভালুকবেড় গ্রামের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান ও নাদিরা বেগম দম্পতির বড় সন্তান।
কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের দুটি ছেলে। সে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। তাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়াচ্ছিলাম। সে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে না এবং আত্মহত্যা করার মতো কোনো কারণও নেই। সে এবারের এইচএসসি ৫ টা পরীক্ষা দিয়েছিল। এরমধ্যে আমার সন্তানের সঙ্গে কী হয়েছে? কীভাবে তাকে মেরেছে আমি জানতে চাই এবং হত্যাকারীদের বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, এটা কোনোভাবেই আত্মহত্যা নয়, তাকে মেলে ঝুলিয়ে রাখছে, যা পা বিছানায় লাগানো ভাজ করা এবং মুখে লালা জিব বের না হওয়াসহ অনেক সিমটম আছে। রুমের দরজার খোলা ছিল, এছাড়া গলায় দুটো গামছা প্যাঁচানো হয়েছে। কিন্তু গামছা তো ছিল রুমে একটা। বেশ কয়েকজন ডাক্তার এটা দেখে বলে এটা আত্মহত্যা না।
তিনি বলেন, যদি পুলিশ কিংবা ডাক্তার হত্যাকারীদের প্ররোচনায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে প্রভাব কাটিয়ে ভুল রিপোর্ট দেয়, আমি আদালতে শরণাপন্ন হব এবং প্রয়োজনে আবারও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উত্তোলন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা ভবনটির সিঁড়িতে লাইট জ্বালানো ও নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। বাড়ির মালিক ইউসুফের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ঘটনা প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে তার জানা নেই। যাঁদের সঙ্গে থাকত তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল নাকি, অন্য কিছু তা পুলিশ বের করবে আশা করি।
এদিকে বাড়ির মালিককে সঙ্গে নিয়ে ফাতেমার সঙ্গে আলাপ করতে গেলে বাসার ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেন নি। অভিযুক্ত ফাতেমা বলেন, পুলিশ দেখছে মৃত্যুর বিষয়টি, তারা তো বলেছে আত্মহত্যা। মৃত্যুর আগে কোনো বিশেষ বিষয়ে কৌশিকের সাথে আলাপ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফাতেমা বলেন, তার তো পরীক্ষা চলছিল। আপনি এখানে কী করেন? স্বামী কোন দেশে থাকেন এসব জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। শুধু বললেন তিনিও বাহিরে যাওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সার্বিক দিক মাথায় রেখে তদন্ত চলমান রয়েছে। একটি ভালো তদন্ত করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে পুলিশ কাজ করছে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, এ বিষয়টি আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। তারপরও যেহেতু মৃতের বাবা দাবি করছে অন্যকিছু, আমরা সেভাবে অতি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি। যাঁদের কথা বলা হচ্ছে তাদেরও আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়া ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে আসলে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি হত্যার আলামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা আসামিদের গ্রেফতার করে, আইনের আওতায় নিয়ে আদালতে সোপর্দ করবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available