ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ইউনিট।

১৭ নভেম্বর সোমবার সকালে ইউনিটটির সম্পাদক অধ্যাপক আল কামাল মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতির পর এদিন সকাল থেকে সাত কলেজের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব পরিবহণযোগে শিক্ষকরা ঢাকা কলেজে জড়ো হন। তবে তারা কেন জড়ো হয়েছেন, এই বিষয়ে একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কেউ মুখ খোলেননি।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাত কলেজের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের বাস ভর্তি করে শিক্ষকেরা ঢাকা কলেজে অডিটোরিয়ামে এসে জড়ো হয়েছেন। ভেতরে আলোচনা সভা চলছে। সাত কলেজের শিক্ষক ছাড়া ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে অডিটোরিয়ামের বাইরে ঢাকা কলেজের বেশ কিছু শিক্ষক অবস্থান করছেন। এসব শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমের বিপরীতে বিসিএস শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করতে তারা জড়ো হয়েছেন।
অন্যদিকে ভেতরের শিক্ষকদের মতবিনিময় সভার চলাকালে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসের গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটির ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকরা যখন বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা কলেজে জড়ো হচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশের ওপর অংশীজনদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সভা শুরু হয়েছে। সভাটি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চলছে। এতে যোগ দিয়েছেন প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তী প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াসসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস না নেওয়ার বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সোহরাওয়ার্দী কলেজ ইউনিটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্বর্তী প্রশাসকের কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ‘২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন প্রক্রিয়া ১৭–২০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে হবে’ এরূপ নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করা যাচ্ছে যে, বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ইউনিটের সদস্যগণ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মাধ্যমে বিধিবদ্ধভাবে সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালনরত বিধায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিশ্চায়ন ও ক্লাস শুরু প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
জানা গেছে, শুধু সোহরাওয়ার্দী কলেজ ইউনিটের পক্ষ থেকে লিখিত বিবৃতি দেওয়া হলেও অন্যান্য সবগুলো ইউনিটের সদস্যদের অবস্থানও একই। সোহরাওয়ার্দী কলেজ ইউনিটের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ইউনিটটির সম্পাদক প্রফেসর আল কামাল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষক। এই বিষয়ে তার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক পরিচয় শোনার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এর আগে, গত ১৬ নভেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ১৬–২০ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি নিশ্চয়ন সম্পন্ন ও ২৩ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে অন্তর্বর্তী প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়। উপদেষ্টার নির্দেশনার পর একই দিনে একই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে অন্তর্বর্তী প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও একই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষকরা সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম হাওলাদার বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক, সাত কলেজের সব অধ্যক্ষ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আজকে দেখলাম শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিরোধিতা করে বার্তা দিয়েছেন। ভর্তির ব্যাপারে তারা এতদিন বলে এসেছে, তারা বিরোধী না। কিন্তু আজকে তাদের বিরোধিতা স্পষ্ট হলো। পাশাপাশি রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও তারা অসম্মানজনক আচরণ প্রদর্শন করেছেন।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন কি সরকারের নির্দেশনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে কিনা, এই বিষয়ে জানতে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়সহ সংশ্লিষ্ট আরও একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অডিটোরিয়ামের ভেতরে আলোচনা, বাইরে বিক্ষোভ
সাত কলেজের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে আসা শিক্ষকদের সমন্বয়ে ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে দুপুর পর থেকে আলোচনা সভা শুরু হয়েছে। অডিটোরিয়ামের ভেতরে যখন শিক্ষকরা সভা করছেন, তখন শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবীন এক শিক্ষার্থী বলেন, ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকবার ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তা বারবার স্থগিত করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসে আসার পরে জানতে পারি, ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এতে আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আজকের মধ্যে যদি ভর্তি কার্যক্রম শুরু না হয়, তাহলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে যাবো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available