• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২০শে আশ্বিন ১৪৩১ রাত ১০:১৩:২৩ (05-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২০শে আশ্বিন ১৪৩১ রাত ১০:১৩:২৩ (05-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:

ফিচার

সূর্যমুখী ফুলে সেজেছে প্রকৃতি

১৮ মার্চ ২০২৩ সকাল ১১:৩২:৫০

সূর্যমুখী ফুলে সেজেছে প্রকৃতি

মাসুদ রানা, বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: মন কাড়া হলুদ ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। এযেনো অপরূপ দৃশ্য। মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। হলুদ রঙের হাজারো ফুল মুখ করে আছে সূর্যের দিকে। সবুজ মাঠজুড়ে সূর্যের হাসিতে হাসছে টাঙ্গাইলের বাসাইলের চাষিরা। গ্রাম-বাংলার চাষিদের মাঠজুড়ে প্রকৃতিতে অসাধারণ এক রূপ মেলেছে সূর্যমুখী ফুলে। ভোর হলেই মিষ্টি সোনা রোদে ঝলমল করে উঠে সূর্যমুখী ফুলগুলো। দেখে মনে হয় সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী।

সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এ ফুলের নাম সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন চলে প্রজাপতি আর মৌ-মাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্যে খুশি কৃষক। তেমনি মোহিত করছে ফুলপ্রেমী মানুষকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দশর্নার্থীরা ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের সাথে ছবি তুলতে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ এসে ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে।

সূর্যমুখী চাষি সোরহাব মিয়া বলেন, আমি সৌদি আরবে ফুলের বাগানে কাজ করেছি। ওখানে অনেক ধরণের ফুল গাছের চারা রোপণ করেছি। সৌদ আরবে সূর্যমুখীর আবাদ বেশি হয়, আর চাহিদাও অনেক। তখন আমি চিন্তা করি দেশে যেয়ে কিছু করবো। করোনার মধ্যে দেশে চলে আসি আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। পরে চিন্তা করলাম বসে না থেকে কিছু একটা করি। তারপর বাসাইল কৃষি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করি। তাদের পরার্মশে গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করি।

তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছি ৬-৭ হাজার টাকা। সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। এ বছর প্রায় ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিন-চারগুণ বেশি আবাদ হয়, যার খরচ প্রায় সমান। সূর্যমূখী চাষ করতে চার- সাড়ে চার মাস সময় লাগে ও দুইটা সেচ দিতে হয়। চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি। আমার বাজারে বিক্রি করতে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে এসে ক্রেতারা নিয়ে যায়।

সোরহাব মিয়া বলেন,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (অনলাইন) বিক্রি করছি। সূর্যমুখী চাষে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে সুন্দর্য বাড়ছে। আমার বাগানে বিভিন্ন এলাকা থেকে এক নজর দেখতে আসছে দর্শনার্থীরা এসে তারা ছবি তুলছে। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা ভাবনা আছে। যারা বেকার ঘরে বসে না থেকে সূর্যমুখীর চাষ করলে তারা অনেক লাভবান হবেন। তেলের চাহিদাও পূরণ হবে। উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে সব ধরণে সহযোগিতা করছে।  

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর দু’শত ৩০ হেক্টর সূর্যমুখীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ পর্যন্ত অর্জন করা হয় দু’শত ৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় ১৪ হেক্টর বেশি আবাদ হয়। যে আবাদ হয়েছে তা থেকে ৪’শত ৪২ মে.টন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে। জেলায় এ বছর ৬২৫ জন কৃষককে সূর্যমুখীর এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এওপি সার প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হয়েছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের আদাজান গ্রামের অর্ণব আল আমিন বলেন, গত বছর সোরহাব মিয়ার সূর্যমুখী ক্ষেতে ঘুরতে এসে অনেক ভালো লাগে। এবছর আমিও আমার বাড়ির উঠানে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক দিকে সুন্দর্য বাড়ছে, অন্য দিকে তেলের চাষিদা পূরণ হবে।

টাঙ্গাইল থেকে ঘুরতে আসা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজীব মিয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখেছি। তাই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসলাম। সূর্যমুখী ফুলের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে।

রাজন সাহা বলেন, তেল উৎপাদনের জন্য বাজারে এ বীজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারবো।

কৃষক লিয়াকত আলী খান বলেন, সূর্যমুখী সরিষার থেকে তিনগুণ-চারগুণ বেশি লাভ হয়। এটার চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। আমারও ইচ্ছে আছে আগামী বছর নিজ উদ্যোগে সূর্যমুখীর চাষ করার। সরকারি ভাবে যদি কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে তাহলে সূর্যমুখীর আবাদ আরও বাড়বে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ভোজ্যতেলের স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্জনের লক্ষে সরিষার আবাদ যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেভাবে সূর্যমূখীর আবাদও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখীর বড় ধরণে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সূর্যমুখী বীজ থেকে একদিকে তেলের চাহিদা পূরণ হবে। সুন্দর্য বাড়ছে দর্শকরা সূর্যমুখীর ছবি তুলার জন্য ক্ষেতগুলোতে ভীড় করছে।

তিনি বলেন, আমরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধির জন্য যেমন উৎসাহ দিচ্ছি। তেমনি তাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করছি, প্রতিনিয়তই তাদের পাশে থেকে। সূর্যমুখীর আবাদ কৌশল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণা দিচ্ছি। রোগ-বালাই থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রণোদনার পাশাপাশি কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করছি। এজন্য টাঙ্গাইলে দিনদিন সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ





বড়লেখায় ২ দিন ধরে কিশোর নিখোঁজ
৫ অক্টোবর ২০২৪ রাত ০৮:১২:০৩