• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ০৩:১০:০৮ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ রাত ০৩:১০:০৮ (12-May-2024)
  • - ৩৩° সে:

সারাবাংলা

কোনো স্কুল নেই কাপ্তাইয়ের দুর্গম কলাবুনিয়ায়

৯ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ১০:৫৮:৩৭

কোনো স্কুল নেই কাপ্তাইয়ের দুর্গম কলাবুনিয়ায়

কলাবুনিয়া গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই পাড়া কেন্দ্র, যেখানে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পায় শিশুরা।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম একটি প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এলাকা। এই চিৎমরম ইউনিয়নের দুর্গম একটি গ্রাম কলাবুনিয়া। যেখানে নেই কোনো প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি পাড়াকেন্দ্র আছে। সেখানে শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা নেয়ার সুযোগটুকু পায়। তারপর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে পড়াশোনা করতে হলে যেতে হয় বহু দূরের কোনো গ্রাম বা শহরে। কিন্তু সেটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই তাদের থাকতে হয় শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েই।

কলাবুনিয়া পাড়ার মেয়ে  উম্রাচিং মারমা। এই বছর কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। এর আগে চিৎমরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক এবং চিৎমরম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন।

চিংসাংমা মারমাও একই পাড়ার মেয়ে। কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার চৌধুরী ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক এবং কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে তিনিও কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। 

অন্যদিকে কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার শিশু নিকেতন স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছেন একই পাড়ার মেয়ে মিলিপ্রু মারমা।  তিনিও কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার চৌধুরী ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন।

তারা সকলেই রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা । কিন্তু তাদের ওই দুর্গম গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় নির্মিত একটি পাড়া কেন্দ্র আছে। সেখানে গ্রামের শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পায়। এরপর প্রাথমিকে ভর্তি হতে হলে তাদের যেতে হয় কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার কোনো বিদ্যালয় বা চিৎমরম এলাকার কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর যাদের সামর্থ্য আছে তারা জেলা শহরে গিয়ে পড়াশোনা করেন। আবার এসব স্কুলে যেতে হলে কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে কিংবা এক ঘণ্টার বেশি পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকলে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার এই প্রতিবেদক যান এই পাড়ায়। লুসাই কন্যা কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত অনিন্দ্য সুন্দর এই গ্রাম। প্রায় ৩৫টি মারমা পরিবারের বসবাস এই পাড়ায়। এসময় পাড়া কেন্দ্রের পাশে কথা হয় উম্রাচিং মারমা, চিংসাংমা মারমা, মিলিপ্রু মারমাসহ অনেকের সাথে। তারা সকলেই বলেন, এই পাড়া কেন্দ্রে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করার পর প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য তাদের যেতে হয় বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু ছোট ছোট শিশুদের প্রাথমিকে পড়ার জন্য প্রতিদিন কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে গিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কারণ, অনেক সময় উত্তাল নদীতে নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া তাদের মা-বাবারা জুমে কাজ করেন, তাই অন্য অভিভাবকদের মতো তারা শিশুদের স্কুলে নিয়ে যেতে পারেন না। তাই, অন্তত পক্ষে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়া দরকার এই গ্রামে। যাতে এখানকার শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষাটা নিজ গ্রামে থেকেই গ্রহণ করার সুযোগ পায়।

এ সময় দেখা হয় এলাকার কারবারি অংহ্লাচিং মারমার সাথে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা কী পরিমাণ কষ্ট করে অন্যত্র পড়াশোনা করতে যায়, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ছোট ছোট শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকায় পড়তে যায়। নদীতে পানি বেড়ে গেলে কিংবা উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর স্রোতধারা বেড়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে তাদের স্কুলে যেতে হয়। সবার পক্ষে তো সেটা সম্ভব হয় না। তাই তারা বঞ্চিত থাকছে শিক্ষা থেকে। আমরা সরকারের কাছে এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের আকুল আবেদন জানাই।

চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী বলেন, আমাদের চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই গ্রামটি অনেক দূরে।  শিক্ষা বিস্তারের জন্য এই গ্রামে নেই কোনো স্কুল। শুধু মাত্র পাড়া কেন্দ্রে শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে থাকে। এই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হওয়া জরুরি।

কাপ্তাই উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার আচার্য্য বলেন, সরকার বিদ্যালয়বিহীন প্রতিটি এলাকায় বিদ্যালয় করতে আগ্রহী। প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ১৫শ’ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের শেষে নতুন করে আরও এক হাজারটি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সরকারের অন্যতম শর্ত হলো ন্যূনতম ৩৩ শতক জমি সরকারের অনুকূলে রেজিষ্ট্রিকৃত হতে হবে। যদি এই এলাকায় প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যায়, তাহলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ