কুমিল্লা প্রতিনিধি: একসময় ভোরের আলো ফোটার আগেই পানি আনতে বের হতে হতো মাজেদা বেগমকে। কুমিল্লা নগরের পদুয়ারবাজার রোডের দিশাবন্ড এলাকার বাসিন্দা তিনি। দুই কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েল কিংবা পুকুরের ময়লা পানিই ছিল ভরসা। এখন বাড়ির পাশেই নিরাপদ পানি পাওয়ায় তার জীবন অনেকটাই বদলে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাজেদা বেগম একা নন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একাধিক নিম্ন আয়ের এলাকায় খোলা পুকুরের পানির ওপর নির্ভরতা ছেড়ে মানুষ এখন নিরবচ্ছিন্ন নিরাপদ পানি পাচ্ছেন। ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পুওর (ডব্লিউএসইউপি) ও দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের আওতায় এই পরিবর্তন এসেছে।


প্রকল্পের তথ্যমতে, এসব এলাকায় আগে মাত্র ১১ শতাংশ পরিবার নির্দিষ্ট সময়ে পানি পেত। বর্তমানে ৭৭ শতাংশ পরিবার ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ পানি ব্যবহার করছে। আগে যেখানে মাসে ৪০০ থেকে ১,০০০ টাকা ব্যয় হতো, এখন সেখানে মাত্র ৩০ টাকায় পানি মিলছে।
নগরীর থিরাপুকুরপাড় এলাকাতেও একই চিত্র। স্থানীয় কমিউনিটি নেত্রী নূরজাহান বেগম ডলি বলেন, আগে পানি আনতে গিয়ে নারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হতেন। এখন পানি-পয়েন্ট থাকায় সেই ঝুঁকি কমেছে।
স্থানীয়দের হিসাবে, পানি সংগ্রহে প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় বাঁচছে নারীদের। স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। পানিবাহিত রোগের হার ৪২ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২ শতাংশের নিচে।
ডব্লিউএসইউপি জানায়, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে ২১৬টি পানি–পয়েন্ট স্থাপন বা সংস্কার করা হয়েছে, যার সুফল পাচ্ছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ। একই সঙ্গে স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় কমিউনিটিই এখন পানি–পয়েন্টগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করছে।
নিরাপদ পানি ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ— এই দুই মিলেই কুমিল্লার নিম্ন আয়ের এলাকাগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available