পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনার ডুমুরিয়ায় জিয়েলতলা মহামায়া আশ্রমের ধর্মগুরু নারায়ণ চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ২৭ আগস্ট বুধবার ভোরে আশ্রম প্রাঙ্গণ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে জিয়েলতলা গ্রামের মৃত হরিপদ রায়ের ছেলে।
জানা যায়, দীর্ঘ বছর যাবত শোভনা ইউনিয়নের জিয়েলতলা গ্রামে প্রতি মঙ্গলবার ধর্মীয় অনুষ্ঠানাধি হয়ে আসছে মহামায়া আশ্রমে। পিতার মৃত্যুর পর থেকে আশ্রমটি পরিচালনা করে আসছে নারায়ন গোস্বামী। খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু-মুসসিমসহ বিভিন্ন ধর্মের শতশত মানুষ আসে আশ্রমে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। ধর্মীয় আলোচনা, ভজন কীর্ত্তনসহ কালি মায়ের আরাধনা করেন ভক্তরা। সেখানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবাও দেয়া হয়। আস্তে আস্তে নারায়ন রায় সকল ভক্তের ধর্মগুরু ওয়ে ওঠেন। বেশ নামডাক ছড়িয়ে পড়ে তার। আশ্রমে আসা ভক্তরা তাকে দেবতার মত শ্রদ্ধা করে। ভক্তরা তাকে গোসাই বাবা বলে ডাকেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই আশ্রমের পাশের গ্রাম কদমতলা এলাকায় এক ভক্তের আহ্বানে তাদের বাড়িতে পারিবারিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যায় নারায়ন গোস্বামী। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানাধি চলে। অনুষ্ঠান পরবর্তী খাওয়া-দাওয়া শেষে গোসাই বাবাকে ঘুমানোর জন্য ঘরের খাটের উপর জায়গা করে দেয়া হয়। এরআগে অনুষ্ঠান চলাকালীন ও বাড়ির দুটি মেয়ে সেই ঘরের রুমে ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছিলো।
রাত আড়াইটার দিকে ঘুমন্ত ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে তার মা ও বাবা পাশের ঘেরের বাসায় যেয়ে ঘুমায়। রাত ৩টার দিকে গোসাই বাবা ঘরে ঘুমাতে যায়। ওই ঘরের মেজেতে বড় মেয়ে ঘুমানো ছিলো। এরপর গোসাই বাবা ঘুমন্ত মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। তখন মেয়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়। গোসাইয়ের অনৈতিক কাজে বাধা দিলে মেয়েকে ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বলে। মেয়ে ডাক-চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে মুখের উপর মুখ রেখে শরীরের উপর উঠে দুই হাত চেপে ধরে। তার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত বুলায় এবং ধস্তাধস্তি করে। একপর্যায়ে মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠলে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য মেয়েকে ভয়ভীতি দেয় এবং বলে আমার ডিসি-ওসিসহ অনেক ভক্তবৃন্দ রয়েছে। তাছাড়া মা কালিও আমার সাথে আছে। একথা কাউকে বললে তোমার (মেয়ের) বড় ক্ষতি হবে।
মেয়ের বাবা বলেন, গোসাই বাবা আমাদের দিক্ষাগুরু। তাকে আমরা দেবতার মত শ্রদ্ধা করতাম। আমার মেয়ের তাকে দাদু বলে ডাকে। ঘটনার পর থেকে মেয়ে আমাদের সাথে অস্বাভাবিক আচারণ শুরু করে। একপর্যায়ে ঘটনার ৩দিন পর মেয়ে ঘটনা খুলে বলে। লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এই বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই জানাজানি হয়ে গেছে।
থানা অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদ রানা জানান, কদমতলা গ্রামের এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় জিয়েলতলা গ্রামের নারায়ন চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available