• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৭শে আশ্বিন ১৪৩১ সকাল ১০:২৯:০৫ (12-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শনিবার ২৭শে আশ্বিন ১৪৩১ সকাল ১০:২৯:০৫ (12-Oct-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

পাচারকালে ঈদ উপহার হিসেবে দেয়া ভিজিএফের আটক

২০ এপ্রিল ২০২৩ বিকাল ০৩:৪৯:৫৩

পাচারকালে ঈদ উপহার হিসেবে দেয়া ভিজিএফের আটক

মোঃ মাইনুল হক (নীলফামারী) প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর অধীনে দুস্থ অসহায় গরিব মানুষের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে দেয়া ভিজিএফের ৮ টন চাল খাদ্যগুদাম থেকেই কালোবাজারে বিক্রি করেছে ইউপি চেয়ারম্যান। সেই চাল গোপনে পাচারকালে আটক করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোখছেদুল মোমিন।

এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে। ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে উদ্ধারকৃত সেই চাল বুধবার সকাল থেকে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তত্বাবধানে বোতলাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফের ৫২ টন চাল বরাদ্দ হয়। এরমধ্যে ৪৪ মে. টন চাল তুলে বিতরণ করে বাকি ৮ মে. টন চাল গণি নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুন। সেই চাল মঙ্গলবার দুপুরে তুলে নিতে ক্রেতা গণি ট্রাক পাঠায় খাদ্যগুদামে।

এই খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোখছেদুল মোমিন দ্রুত ছুটে আসেন। এসময় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) জানান, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সব চাল গত ১৬ এপ্রিলই উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ ওয়েট স্কেল রেজিস্টারে দেখা যায় ১৬ এপ্রিল ২২ মে. টন এবং ১৭ এপ্রিল ২২ মে. টন চাল নিয়েছে চেয়ারম্যান জুন।

তখন এ সংক্রান্ত প্রমাণ স্বরুপ সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে এলএসডি'র ওসি শামীমা নাছরিন সত্যতা স্বীকার করে যে, বোতলাগাড়ীর ৮ মে. টন চাল এখনও খাদ্যগুদামে মজুদ আছে। ইউপি চেয়ারম্যান জুনের সেই চাল নিয়ে এত টালবাহানা কেন প্রশ্ন করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

অথচ উক্ত চাল কাবিখা ও টিআর এর ৩০ মার্চের ডিও'র সাথে ১৬ এপ্রিলে ইস্যুকৃত অন্য একটি ডিও দেখিয়ে তুলে নিতে এসেছে ক্রেতা গণি। এই তথ্য তৎক্ষণাৎ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হলে চাল দেয়া বন্ধ করে ট্রাক ফিরিয়ে দেয়া হয়।

এলএসডি'র ওসি শামীমা নাছরিন এসময় বলেন, আমরা ডিও অনুযায়ী মাল দেই। রেজিস্টারে একসাথেই সবমাল তুলে নেয়ার তথ্য এন্ট্রি করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ডিওধারীরা এক বা একাধিক দিনে মাল নিয়ে যায়। এতে পৃথকভাবে কোন চালান হয়না। এক ডিও দিয়েই বার বার মাল নিতে পারে। মৌখিকভাবে এসংক্রান্ত হিসেব থাকলেও কোন লিখিত তথ্য প্রমান রাখা হয়না।

বুধবার চাল তোলার সময় সংবাদকর্মীদের এলএসডি তে প্রবেশে বাধা দেন শামীমা নাছরিন। এদিন সকালে ইউএনও'র নির্দেশে কালোবাজারে বিক্রিকৃত ও পাচারকালে আটককৃত সেই চাল উত্তোলন করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাশেদুল ইসলাম। এই চাল ইউপি চেয়ারম্যান না নিয়ে আপনারা কেন তুললেন জানতে চাইলে পিআইও কোন মন্তব্য না করে সটকে পড়েন।

একটি সূত্রের মতে, এলএসডি'র ওসি ও তার স্থানীয় সহযোগী গুলজার, লোড-আনলোড শ্রমিক নেতা জিকরুলের সমন্বয়ে ডিওধারীরা কালোবাজারে চাল বিক্রি ও পাচার কার্যক্রম চালিয়ে নিয়মিত সরকারী বরাদ্দের খাদ্যশস্য (ধান, চাল, গম) আত্মসাত করছে। এটা খাদ্যগুদামের নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসনের তদারকি কর্মকর্তার যোগসাজশও এইক্ষেত্রে আছে। নয়তো চাল উত্তোলন ও বিতরণের সঠিক তথ্য না দিয়েই তারা প্রত্যায়ন দেয় কিভাবে?

সেই পথ ধরেই ইউপি চেয়ারম্যান জুন এই ৮ মে. টন চাল বিক্রি করে দিয়েছে এবং ভিজিএফ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে তদারকি অফিসারের প্রত্যায়ন ও মাস্টার রোল পিআইও অফিসে জমা দিয়েছে। অর্থাৎ সে সব চাল তুলে জনগণের মাঝে বিতরণ শেষ করেছে। অথচ এখনও ভিজিএফের স্লিপ নিয়ে চাল তুলতে এসে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। কারণ বাকি চাল বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ইউনিয়নে এবার সাধারণ মানুষ বেশি স্লিপ পায়নি। অধিকাংশই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে চেয়ারম্যান মেম্বার। সোমবার (১৭ এপ্রিল) পরিষদের পাশের ভাই ভাই টেলিকম দোকানের মালিক শতাধিক স্লিপ কিনে নিয়ে শিশুদের দিয়ে চাল তোলার সময় সাংবাদিকদের তৎপরতায় প্রশাসন এসে সীলগালা করে। পরেরদিন মঙ্গলবার বিকালে এক বাড়ি থেকে ৩০৬ কেজি ভিজিএফের চাল জব্দ করে এসিল্যান্ড।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, মনিরুজ্জামান জুন ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই নানা নেতিবাচক ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে। বিশেষ করে অনিয়ম দূর্নীতিতে আপাদমস্তক আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। গতবারও তার চোরাই এক পিকআপ চাল নীলফামারীতে আটক হয়েছিল। তাছাড়া ভিজিডিসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দেয়া এবং চাল  বিতরণে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

গতবছর ভিজিডির চাল বিতরণে টাকা নেয়ার ঘটনা হাতে নাতে ধরে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শোকজ করলেও কার্যকর কোন কিছু না হওয়ায় সে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সে কালোবাজারে চাল বিক্রি করে আত্মসাৎ করতে চেয়েছিল। কৌশলে ৩ মে. টন চাল পাচার থেকে রক্ষা করে হকদার দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে বন্টন করা সম্ভব হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানকে এব্যাপারে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেইসাথে খাদ্যগুদামে বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে। নোটিশের জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদন এবং সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নাই। স্লিপ ও চাল বিক্রি এবং উদ্ধার বিষয়েও চেয়ারম্যান মেম্বারদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ