হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) খুরশীদ জাহান হক হলে গত ২৪ মে ২০২৫ তারিখে লুকিয়ে মেয়েদের ছবি ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে এক ছাত্রীকে অভিযুক্ত করে হল থেকে বের করে দেন অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার দুই মাস পর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী মুস্তাফসীরা মিমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’ তবে তার এই দাবি অস্বীকার করেছেন তার রুমমেটরা।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন রুমমেটদের সন্দেহ হয় যে মিমি ভিডিও কলে তাদের দেখাচ্ছেন এবং অজান্তেই ছবি তুলছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার দিন দুপুরে মিমি গোসলে গেলে তার রুমমেটরা মোবাইল ফোন চেক করে গ্যালারিতে তাদের অজান্তে তোলা ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর চ্যাটিং দেখতে পান। বিষয়টি হল সুপার ও প্রক্টরকে জানানো হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং হলের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে অপমান করেন। একপর্যায়ে প্রশাসনের সহায়তায় তাকে হল থেকে সরিয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা মিমির ফোনটি দিনাজপুর কোতোয়ালী থানায় জমা দেন। তদন্তে কোনো আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। ঈদের ছুটি শেষে ২২ জুন দুই পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিমির বাবা-মায়ের কাছে প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে বিষয়টি না বাড়ানোর অনুরোধ জানায়।
মিমি অভিযোগ করেন, ‘আমার চার রুমমেট দীর্ঘদিন ধরে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। পড়াশোনার পরিবেশ না থাকায় আমি রিডিং রুমে পড়তাম। ঘটনার দিন আমার ফোন কেড়ে নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পুরো হল উত্তাল করে তোলে। অথচ তদন্তে আমার ফোনে কোনো আপত্তিকর তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেও কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেয়নি। আমি সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছি এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার রুমমেটরা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্দেহজনক আচরণ, ভিডিও কলে ক্যামেরা ঘোরানো, এবং অজান্তে ছবি তোলার কারণে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। এক রুমমেট বলেন, “আমরা আমাদের ছবি দেখেছি ফোনে, সেইসাথে অ্যাবিউজিং চ্যাটিংও পেয়েছি। এতে করে উদ্বিগ্ন হওয়া তো স্বাভাবিক।”
মিমি দাবি করেন, ‘গ্রুপ ছবিগুলো আমি স্যারকে দেখানোর জন্য তুলেছি যে ওরা রাতে লাইট না নিভিয়ে হইচই করে। আর সিংগেল ছবিটা নিজের ছবি তুলতে গিয়ে ভুল করে তুলেছি, পরে ডিলিট করার কথা মনে ছিল না।’
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি তাদের ছবি কোথাও দিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।’
এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এমদাদুল হাসান বলেন, ‘প্রক্টরের সাথে কথা বলে জানাবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কোতোয়ালী থানার তদন্তে মিমির মোবাইল ফোনে গোপন ভিডিও ধারণের ও আদান প্রদানের কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা।
খুরশীদ জাহান হক হলের হলসুপার অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘ফোনে তার রুমমেটের ছবি এবং বাহিরের কারো সাথে আপত্তিকর ভাষায় চ্যাটিং এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ভিডিও আদান-প্রদানের তেমন কোনো প্রমাণ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে তাকে নিরাপদে হল থেকে সরিয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে প্রক্টর ও অ্যাডভাইজারের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।’
দুই পক্ষের সম্মতিতে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নিয়ে বিষয়টির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে সবাই সচেতন থাকবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available