ডিআইইউ প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে বিভাগের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন।
১৫ আগস্ট শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ইইই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালান। আন্দোলনের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল বাসেদ তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
ঘটনার সূত্রপাত উল্লেখ করে অধ্যাপক মো. আব্দুল বাসেদ বলেন, অনেক দিন আগে বিভাগের দুই শিক্ষিকাকে কেন্দ্র করে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সমস্যার জন্য দায়ী শিক্ষার্থীদের ডেকে বলা হয়, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের নাম বলো। বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করে ফেলি। তা না হলে বিষয়টি আইসিটি আইনের আওতায় পড়তে পারে, শিক্ষিকারা মামলা করলে বড় ধরনের ঝামেলা হতে পারে।’ এটাকে তারা হুমকি হিসেবে নিয়েছে। পরবর্তীতে এই সমস্যা সৃষ্টিকারী ইভিনিং সিফটের ৫৩, ৫৪ ও ৫৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
গত শুক্রবার ক্লাস চলাকালীন সময়ে বিকেল ৩টার পর থেকে ইইই বিভাগের কয়েক ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে একত্রিত হয়। পরে চেয়ারম্যানকে পরিবর্তন করার জন্য ১১ দফা দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে একই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেককে চেয়ারম্যান করার জন্য দাবি করেন তারা। আন্দোলনের একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অধ্যাপক মো. আব্দুল বাসেদ সরে দাঁড়ান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, একটি ডিপার্টমেন্টের সুষ্ঠু পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ এবং একাডেমিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য একজন অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও ইইই ব্যাকগ্রাউন্ডের চেয়ারম্যান থাকা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও ডিপার্টমেন্টের মান বজায় রাখতে নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রয়োজন।
তাদের আরও অভিযোগ, একজন শিক্ষক দুই ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হওয়া, প্রাথমিক উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া, যোগাযোগে অনীহা, স্বজনপ্রীতি, নিজস্ব গ্রুপিং ও পক্ষপাতমূলক পরিচালনা। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাব ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মাধ্যমে ডিপার্টমেন্ট পরিচালনার অভিযোগও তারা করেন।
‘তারেক স্যারের মাধ্যমেই মব সৃষ্টি হয়েছে’এমন অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘যখন মব সৃষ্টি হচ্ছিল, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তারেক স্যারের নাম দিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। তাকে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান করার কথা বলছিল এবং বাসেদ স্যারকে অপসারণের দাবি তুলছিল। তখন তারেক স্যার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেননি। আন্দোলনকারীরা তারেক স্যারের মাধ্যমেই মব সৃষ্টি করেছে।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে প্রভাষক সারিকা মানজুম ইসলাম বলেন, ‘যখন তিনি সিএসই বিভাগের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তখন আমাদের ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের ও দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, উনি এখানে থাকবেন না, তবে ডিপার্টমেন্ট যোগ্য চেয়ারম্যানের হাতে দিয়ে যাবেন। যে মানুষটা কিছুদিন পর চলে যাবেন, সেই মানুষটাকে এখন সরানোর দাবিটা আমার যৌক্তিক বলে মনে হয় না।’
আন্দোলনটিকে প্রতিবিপ্লব আখ্যা দিয়ে বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘গত বছর আমার সাথেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার দুই বছর পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মব সৃষ্টি করে। একটা বিপ্লবের যেমন প্রতিবিপ্লব থাকে, তেমনি শিক্ষার্থীরা এই এক বছর পর্যবেক্ষণ করেছে। তাই এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’
ইইই বিভাগের প্রভাষক ও কো-অর্ডিনেটর হাসিবুল হাসান ভূঁইয়া আবিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ব্যবহার আমাদের শিক্ষকদের প্রতি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এজন্য আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। যদি এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিচার না হয় তাহলে আমরা সবাই পদত্যাগ করবো।’
শিক্ষক পদত্যাগের বিষয়ে দেওয়া তথ্যকে ‘ভুল’ বলে দাবি করেছেন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক। তিনি বলেন, ‘কেউ পদত্যাগ করেননি। বরং শিক্ষকরা ইভিনিং শিফটে ক্লাস না নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কর্মবিরতির জন্য জোরপূর্বক তাদের দিয়ে সই করানো হয়েছে।’
কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রভাষক সারিকা মানজুম ইসলাম বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীদের আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, যদি তাদের দ্বারা আমরা অসম্মানিত হই, তাহলে তাদেরকে শিক্ষা প্রদান করতে আমাদের খুব একটা স্বস্তি বোধ হওয়ার কথা নয়। সেই জায়গা থেকে আমরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শিক্ষক গ্রুপিং নিয়ে প্রভাষক সারিকা মানজুম ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো দল নেই। আমরা শিক্ষকরা সবাই এক, আমরা এক কথাতেই আছি এবং থাকবো। আমাদের মধ্যে কোনো দল নেই। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুইটি দল আমি লক্ষ করেছি।’
এই ঘটনা ঘটার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রুপিং থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন শিক্ষকরা এই ঘটনা ঘটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিতে পারে। একটা গ্রুপ আন্দোলন করছিল, তারপরে আরেকটা গ্রুপ এসে হাজির হলো। তাহলে অন্য একটা গ্রুপ নিয়ে এসে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা—এটা তাহলে কে করলো?’
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল বাসেদ পদত্যাগ করলেও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। শিক্ষকদের কর্মবিরতির ঘোষণা দিলেও কিছু শিক্ষক ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। ইইই বিভাগের নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হবে কিনা— এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available