ডেস্ক রিপোর্ট: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দাবি করেছেন, ওই সময় সর্বোচ্চ দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে পিনাকী এ দাবি তোলেন। স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই হাজার।’ এ ছাড়া তিনি ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে কিছু ‘তথ্য-প্রমাণ’ সংযুক্ত করেন এবং একটি ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করেন।
ভিডিওতে পিনাকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এটা মিথ্যা কথা। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তিনি দাবি করেন, সে সময় ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল ৯০ হাজার মানুষ। অথচ শেখ হাসিনার পতনের পর লাখ খানেক মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ১৯৭১ সালেও এত মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়নি।
তিনি বলেন, সে সময় এক বিদেশি সাংবাদিককে শহীদের সংখ্যা তিন লাখ বলতে গিয়ে তিন মিলিয়ন বলে ফেলে। এরপর সংবাদমাধ্যমে কপি-পেস্ট হতে হতে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তিন লাখ সংখ্যাটাই বা কোন সার্ভের ভিত্তিতে পেয়েছে। এ নিয়ে কোনও জবাব পাবেন না। এসব ভারতীয় প্রোপাগাণ্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সংখ্যাটাও ভিত্তিহীন সংখ্যা দাবি করে কয়েকটি বইসহ কিছু রেফারেন্স দিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, মাত্র তিনটি ডিভিশন ব্যবহার করে ৩০ লাখ মেরে ফেলল? কেউ প্রশ্ন করল না। একটি রিপোর্টে সংখ্যা বেরিয়ে আসে, ৩ লাখ ৩০ হাজার বা ১০ হাজার না, মাত্র দুই হাজার। পুলিশের কাছে মাত্র ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকার অভিযোগ জমা পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করলে প্রকৃত সংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে আসবে বলে মত তার।
পিনাকীর এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সামনে আসছে। এর মধ্যে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য নতুন নতথ্য সামনে আনলেন। বিষয়টি নিয়ে কমেন্ট বক্সে অনেকেই লিখেছেন, এ ধরনের বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। রিয়াজ উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, অতিরঞ্জিত হয়ে গেলো নাহ দাদা?
রবিউল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, আপনার এই বক্তব্য ১৯৭১-এর শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বহু গবেষণা, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা এবং ইতিহাসে প্রমাণিত যে, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষাধিক মা-বোন পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়েছেন। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মনগড়া তথ্য দিয়ে জাতির ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারি হিসাব ও একাত্তর সালে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস ইত্যাদি ঘাতক বাহিনীর হাতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন এবং দুই লাখেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available