• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ৩০শে ভাদ্র ১৪৩২ রাত ১০:২৭:৪১ (14-Sep-2025)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

নারায়ণগঞ্জে ৮ মাসে ৮৫ খুন

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ০৮:৩৫:০০

সংবাদ ছবি

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ : প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ আজ যেন আতঙ্কের নগরী। একের পর এক লোমহর্ষক খুনে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই এ জেলায় খুন হয়েছে ৮৫ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে খুনের সংখ্যা ১০ জনেরও বেশি। হত্যার পাশাপাশি বেড়েছে চুরি, ছিনতাই, মাদক ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধ। জনবল ও পরিবহনের চরম সংকটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।

অপরাধের পরিসংখ্যান

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে নারায়ণগঞ্জে খুনের ঘটনা ঘটেছে মোট ৮৫টি। একই সময়ে চুরি হয়েছে ৯৭টি, ছিনতাই ৩৪টি, ডাকাতি ১৯টি। এ ছাড়া ৭৬১টি মাদক মামলা এবং নারী নির্যাতন আইনে ২০৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিটি মামলাই নারায়ণগঞ্জের অপরাধ চিত্রকে ভয়ংকর করে তুলছে।

জনসংখ্যা ও পুলিশের অনুপাত

জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭৪ জন। তবে জন সংখ্যা হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। অথচ এত বিপুল জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের সদস্য মাত্র ১ হাজার ৯৬২ জন। গড়ে প্রতি ২ হাজার ৫৫০ জন মানুষের জন্য রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। ফলে পুলিশের পক্ষে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শুরু করে শহরাঞ্চল সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

পরিবহন সংকট

জনবল সংকটের পাশাপাশি পুলিশের রয়েছে পরিবহন সংকট। গত বছরের ৫ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজার থানায় হামলার ঘটনায় বিপুলসংখ্যক অস্ত্র লুটের পাশাপাশি পুলিশের একাধিক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনের সময়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও কিছু যানবাহন। এর ফলে আজও পরিবহনের ঘাটতি কাটেনি। জেলা পুলিশের জন্য বর্তমানে অন্তত ৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ ও ট্রাফিক বিভাগের জন্য ২০টি মোটরসাইকেল জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার না হওয়ায় আশঙ্কা

৫ আগস্ট হামলার ঘটনায় পুলিশের মোট ১৫১টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ১১০টি উদ্ধার করা গেলেও এখনো ৪১টি অস্ত্র নিখোঁজ। এসবের মধ্যে রয়েছে ৮টি চায়না রাইফেল, ২টি চায়না এসএমজি, ৪টি পিস্তল, ৭টি এমএম পিস্তল, ১৬টি বোর শর্টগান ও ৪টি এমএম গ্যাসগান। পাশাপাশি লুট হওয়া ৯ হাজার ২৫ রাউন্ড গুলির মধ্যে এখনো ৭ হাজার ৫১৮টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র-গুলি উদ্ধার না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আলোচিত হত্যাকাণ্ডে

এ বছর নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া খুনের ঘটনাগুলো একেকটি লোমহর্ষক কাহিনি বয়ে এনেছে।

গত ১৮ জানুয়ারি আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে মিলন মিয়া (৫০) নামে এক ট্রলার চালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের পুরান বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছুরিকাঘাতে ২ যুবকের মৃত্যু হয়।

গত ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পঞ্চবটি-মুক্তারপুর রোডের কাশিপুর এলাকায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে পাভেল (৩৯) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গত ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে দুই নারী ও এক শিশুর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

গত ১৪ জুন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর নরসিংহপুর এলাকায় মাদক ব্যবসার পাওনা টাকা না পেয়ে স্বপন মোল্লা (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

গত ৪ জুলাই আড়াইহাজারের পূর্বপাড়া এলাকায় বাবাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। নিহত বাবার নাম মো. মাহবুব (৪২)। তিনি কৃষি কাজ করে জীবিকানির্বাহ করতেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ছেলে মো. ইয়াসিন (২২) পলাতক রয়েছে।

গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কুড়িপাড়া স্কুলমাঠ সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এক মস্তকবিহীন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম হাবিবুর (২৮)। তিনি সোনারগাঁ থানার কাঁচপুর মধ্যপাড়া এলাকার মো. চান মিয়ার ছেলে। মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে।

রাজনৈতিক সংঘর্ষে রক্তপাত

অপরাধের তালিকায় যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সংঘর্ষও। গত ১৯ মার্চ রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। জুন মাসে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিতে প্রাণ হারান এক ব্যবসায়ী। একই মাসে বন্দর উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বদ্বে দুইজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ জুলাই মাসে আড়াইহাজারে বিএনপির অফিস ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক দোকান মালিক ও মৎস্যজীবী দলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

পুলিশের দাবি

নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘৫ আগস্টের আগের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে, ফলে অপরাধ কিছুটা বেড়েছে। তারপরও আমরা কঠোর নজরদারিতে পুরো জেলাকে রেখেছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা বদ্ধপরিকর।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ

সংবাদ ছবি
দেশের জনগণ নতুন শাসক দেখতে চাই: গোলাম পরোয়ার
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ০৯:২৯:২৮


সংবাদ ছবি
রাতের আঁধারে সক্রিয় বুটেক্সে মাদক নেটওয়ার্ক
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ০৮:৫৮:৪১


সংবাদ ছবি
নারায়ণগঞ্জে ৮ মাসে ৮৫ খুন
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ০৮:৩৫:০০




সংবাদ ছবি
আইসিসিএলে একটি ইভেন্ট বুকিং করলে অন্যটি ফ্রি!
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৭:০০

সংবাদ ছবি
সেনবাগে ৬ সন্তানের জন্ম দিয়ে এক প্রসূতি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৬:৩১