আন্তর্জাতিক ডেস্ক: স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া আর মানবে না বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্তের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ন্যাটোর 'রাশিয়া-বিরোধী নীতি'কে দায়ী করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মস্কো এ নীতির জবাবে 'আরও পদক্ষেপ' নেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া মেদভেদেভ সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর এই সর্বশেষ আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে মেদভেদেভ বলেন: 'রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাঝারি ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণাটি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর রাশিয়া-বিরোধী নীতিরই ফল। এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের সব প্রতিপক্ষকে মাথায় রাখতে হবে। অপেক্ষা করুন, আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
রাশিয়ার ক্ষমতাধর নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মেদভেদেভ গত কয়েক বছরে দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে বেশ কয়েকবার কট্টরপন্থি মন্তব্য করেছেন। তবে 'আরও পদক্ষেপ' বলতে কী বুঝিয়েছেন, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাননি।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে মেদভেদেভের মন্তব্যের জবাবে তিনি দুটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিনকে 'উপযুক্ত অঞ্চলে' মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ইউরোপ ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তারা স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, 'যেহেতু পরিস্থিতি ইউরোপ ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত ল্যান্ড-বেজড মাঝারি ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রকৃত মোতায়েনের দিকে এগোচ্ছে, তাই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে যে অনুরূপ অস্ত্রের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার শর্ত আর থাকছে না।'
গত বছর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর উসকানির জবাবে মস্কোকে হয়তো ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হতে পারে।
ডিসেম্বরে লাভরভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে বলেছিলেন, মস্কোর এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা 'কার্যত আর টেকসই নয় এবং তা পরিত্যাগ করতে হবে'।
লাভরভ সংবাদ সংস্থাটিকে আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ঔদ্ধত্যের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সতর্কতা উপেক্ষা করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই শ্রেণির অস্ত্র মোতায়েনের দিকে এগিয়ে গেছে।'
২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে মস্কো বলেছিল, ওয়াশিংটন এমন অস্ত্র মোতায়েন না করলে তারাও মোতায়েন করবে না।
১৯৮৭ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে স্বাক্ষরিত আইএনএফ চুক্তি ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র—এই পুরো শ্রেণির অস্ত্রকে নির্মূল করেছিল।
সোমবার ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েন-সংক্রান্ত মন্তব্যের প্রথম প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি এবং বলেছে যে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়াতে আগ্রহী নয়।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মনে করি পারমাণবিক বাগাড়ম্বর নিয়ে প্রত্যেকেরই অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।'
এই ঘটনাটি এমন এক সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে, যখন ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দেশটির তেল ক্রেতা, যেমন ভারত ও চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পুতিন শুক্রবারের মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে তিনি এসব পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available