• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ২৩শে আশ্বিন ১৪৩২ দুপুর ০২:২২:৫৭ (08-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

‘লাল চন্দন’ ভেবে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নদীতে ভেসে আসা গাছ

৮ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১১:৫০:২৩

সংবাদ ছবি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ‎উজানের ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদীতে ভারতের দিক থেকে ভেসে আসছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসব গাছের গুঁড়ির বেশিরভাগই বাকল ও শিকড়বিহীন এবং লালচে রঙের। দেখতে লালচে হওয়ায় অনেকেই এগুলোকে ‘রক্ত চন্দন’ বা ‘লাল চন্দন কাঠ’ ভেবে ভুল করছেন।

‎৫ অক্টোবর রোববার ভোর থেকেই কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদীতে এসব কাঠ ভেসে আসতে শুরু করে। উৎসুক জনতা ভোর থেকেই নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নেমে পড়ে কাঠ ধরার প্রতিযোগিতায়। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলা বানিয়ে কাঠগুলো নদী থেকে ধরে তীরে তুলতে শুরু করেন। তীরে তুলেই অনেকে বিক্রি শুরু করেন।

‎স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরও চড়া। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গাছের গুঁড়ি “লাল চন্দন” মনে করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। তবে মালিক পক্ষ জানিয়েছে, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিলে বিক্রি করবে।

‎রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো একটা লাল গাছ তুলেছি। এটা দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। আমরা দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজারে দিলে বিক্রি করে দেব।

‎এদিকে অনেকে এই কাঠের গুঁড়িগুলো জ্বালানি হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন বলেন, আমার খড়ির গোলা আছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। কেটে বিক্রি করব জ্বালানি কাঠ হিসেবে।‎



‎ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রাখব রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাকিটা বিক্রি করব। মানুষ দামে কিনছে।

‎ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার হাসিমারা বনাঞ্চল দিয়ে কালজানি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানিতে ওইসব বনাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখান থেকে ভেসে এসেছে গাছের গুঁড়িগুলো এমন ধারণা বন বিভাগের।

‎জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনাই এসব কাঠে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই পচা কাঠ।

‎তিনি আরও বলেন, সম্ভবত বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামের দিকে ভেসে এসেছে। মানুষ না বুঝেই এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।‎

‎কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় সব কাঠেই ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। এ কারণে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রঙ ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই।‎

Ad
Ad



‎তিনি বলেন, চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘঁষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো ধরনের গন্ধ বা তেলীয় উপাদান নেই, যা প্রমাণ করে এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।

‎রোববার সকালে নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের খেলারভিটা এলাকায় কাঠ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে যান মনছুর আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তি। তিনি খামার নকুলা গ্রামের বাসিন্দা।

‎নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মাসুদুর রহমান বলেন, নদীতে স্রোত ছিল খুব তীব্র। সোমবার বিকেল পর্যন্ত খোঁজ চালিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করেছি।

‎গত রোববার ও সোমবার দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, নুনখাওয়া, বেরুবাড়ী, ইসলামপুর ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট পর্যন্ত দুধকুমার নদীর দুই তীরে মানুষের ভিড়। কেউ নৌকা, কেউ টায়ার টিউব বা বাঁশের ভেলায় চড়ে কাঠের গুঁড়ি ধরছে। দুই দিনে হাজার হাজার কাঠের গুঁড়ি তীরে তুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি কাঠের আকার ও গুণমান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। অনেক কাঠ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা কম দামে জ্বালানির জন্য বিক্রি হচ্ছে।

Ad
Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ





সংবাদ ছবি
বকশীগঞ্জে গাছ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
৮ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:৩০:৩৫


সংবাদ ছবি
এআই পার্টি ফোন নিয়ে আসছে রিয়েলমি ১৫ সিরিজ
৮ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ১২:১০:১৬





Follow Us