পাবনা প্রতিনিধি: বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরতে পারবো কিনা এটার নিশ্চয়তা পাই না। স্কুল শেষ করে বাড়িতে পৌঁছাতে পারব কিনা এটারও নিরাপত্তা নেই। ছেলেমেয়েরা বাড়ির বাইরে বের হলেও শঙ্কিত থাকতে হয় বলে জানিয়েছেন পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ জাহিদুল ইসলামের পিতা দুলাল উদ্দিন মাষ্টার।
৩ আগস্ট মঙ্গলবার পাবনা ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর বলরামপুর এলাকার শহীদ জাহিদুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তিনি এসব কথা জানান। দুলাল মাষ্টার বলেন, ৫ তারিখে স্বৈরাচার পতন হলেও বর্তমানে আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছি। এসব খুনি ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। রাতেও আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আফসোস করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। তারা আমাদের খোঁজখবর পর্যন্ত নিচ্ছে না। কোনো কাজে পুলিশকে ফোন দিলেও বলে যে, দেখতেছি। এরপর আর কোনো খবর থাকে না। চাইছিলাম কোনো কেস-কাচারী করব না। রাজনৈতিক নেতারা আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। এখন তারা আমাদের খোঁজখবর ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। যেটা খুবই দুঃখজনক। এক বছর হয়ই নাই অথচ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ইয়ারকি-টিটকারি করে। আসলে সামনে তো আমরাই অপরাধী হয়ে যাবো বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের তাদের কোনো কথা শুনছে না বলে অভিযোগ করে বলেন, হত্যা মামলার আসামি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এখনো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে।
শহীদ জাহিদুল ইসলামের ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের আন্দোলনের স্মৃতি এখনো মনে পড়লে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। আসলে আমার ভাই শহরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হোয়াটস্যাপ গ্রুপ খুলে সবাইকে একত্র করতেন। যাইহোক এসব খুনি এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে ঠিকমতো বের হতে পারি না।
শহীদ জাহিদের পিতা দুলাল উদ্দিন মাষ্টার। তিনি পশ্চিম চর বলরামপুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোট ভাই নাহিদুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চর বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বোন দিলারা পারভীন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করে বর্তমানে হেলথে চাকরি করছেন। বাড়িতে জাহিদের নামে দোতালা ফাউন্ডেশন দিয়ে পাঠাগার বানানো হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ফাউন্ডেশন করে গরিব মানুষের জন্য সহযোগিতা করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পরিবার থেকে জানানো হয়, জুলাই ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও ডিসি অফিস থেকে দুই লাখ টাকা সঞ্চয় পত্র দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়া শিবিরও অনুদান দিয়েছে। পলিটেকনিক্যালের আইডিবি ভবন থেকে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ১০ হাজার দিয়েছে। শেকড় পাবনা ফাউন্ডেশন দিছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ক্রেষ্ট, স্মারক গন্থ, শহীদদের জীবনী গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) এ এফ এম মনিরুজ্জামান মন্ডল বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো শহীদ পরিবার অভিযোগ দেয়নি যে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আমরা সব সময় তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেফতার আছেন। আর বিস্ফোরক মামলায় ১১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। দুটি মামলাই তদন্তাধীন রয়েছে। খুব দ্রতই চার্জশিট গঠন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available