নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগেঞ্জর আড়াইহাজারে ৭০ বছর ধরে বেদখল হওয়া ৬০ কোটি টাকা মূল্যমানের ২৩ একর জমি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা হয়েছে।
জমি দখলকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিলে জেলা প্রশাসক এ জমি উদ্ধার ও অনাকাঙ্ক্ষিত সৃষ্ট পরিস্থিতি শান্ত করতে নানা উদ্যোগ নেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর প্রতিবেদন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সুপারিশ যাচাইয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী জমিটি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। জমি উদ্ধারের পর সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে বেদখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার ও ওই জমিতে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পুরো এলাকায় ফিরে আসে স্বস্তি। জেলা প্রশাসকের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাট সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে প্রায় ২৩ একর জমি ৭০ বছর ধরে বেদখল অবস্থায় ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মালিকরা ভারতে চলে গেলে এ জমি অব্যবস্থাপনার সুযোগে স্থানীয় শতাধিক পরিবার চাষাবাদ শুরু করে। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখলে নিয়ে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে। পরে ৫ আগস্ট বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জমি দখলে যায়, ফলে এলাকায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমন খবর পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা কঠোর নির্দেশ দেন আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসনকে, যেন এক ইঞ্চি জমিও আর বেদখল না হয়। জমিটি মালিকবিহীন হিসেবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি।
আড়াইহাজার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন বলেন, সব দাবিদারকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরে শুনানিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, সবাই ভুয়া মালিক। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসকে মো. মামুনুর রশীদ দ্রুত এ সংক্রান্ত ফাইল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। পরে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম ১৬ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার নথিতে স্বাক্ষর করে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ দেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এই জমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে জমিটি আর বেদখল হবে না। পাশাপাশি স্থানীয়রা পর্যটন সুবিধা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
স্থানীয় বিশনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হামিদ ও ফেরিঘাট জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান বলেন, আমার দাদা-বাবা এ জমিতে চাষ করতেন। কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক এমপি নজরুল ইসলামের লোকজন আমাদের কাছ থেকে জমি বেদখল করে নেয়। সরকার যদি ইকোপার্ক করে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু চাই, আর যেন প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available