আনর্জাতিক ডেস্ক: শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবরোধ ভাঙার উদ্দেশে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা মানবিক সহায়তা বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। তারা বহর থেকে অন্তত ২২৩জন কর্মীকে আটক করেছে। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বইছে ক্ষোভ, নিন্দা জানিয়েছেন নেতারা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ফ্লোটিলার ৪০টি নৌযান আটকানোর ঘটনায় ইসরায়েলের আগ্রাসনকে নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলি সরকার যে শান্তির কোনো আশা বাড়তে দিতে চায় না তা আবারও প্রমাণ করল।
আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন একেপি দলের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় এরদোয়ান বলেন, ফ্লোটিলায় থাকা তুর্কি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুরস্ক সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় কর্মীদের আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আটকদের ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দাবি করেছেন। আটককৃতদের মধ্যে ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা। তিনিও ইসরায়েলের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গাজা ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছিলেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অন্তত ছয়জন দক্ষিণ আফ্রিকান ছিলেন। প্রায় ৪৫ জাহাজের এই বহর মানবিক সাহায্য নিয়ে গাজায় যাচ্ছিল। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দিয়েছে।
এদিকে বহরে হামলার ঘটনায় বুধবার তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ফ্লোটিলায় থাকা দুই কলম্বিয়ান নাগরিককে আটক করার ঘটনায় ‘ইসরায়েলি গণহত্যাকারী বাহিনীকে’ নিন্দা জানান।
তিনি অবিলম্বে ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশনকে কলম্বিয়া থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন এবং ঘটনাকে ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আরেকটি আন্তর্জাতিক অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। পেত্রো আরও ঘোষণা দেন, কলম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বাতিল করেছে।
ব্রাজিল নিশ্চিত করেছে, তাদের ১৫ জন নাগরিক, যার মধ্যে একজন ফেডারেল ডেপুটি আছেন, ফ্লোটিলায় ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা জানিয়েছেন, ব্রাজিল তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আর প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সরকার জোর দিয়ে বলেছে, ফ্লোটিলায় থাকা লোকজনের জীবনের পূর্ণ দায়িত্ব ইসরায়েলের।
ভেনিজুয়েলা এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত জলদস্যুতা’ আখ্যা দিয়েছে।
গভীর উদ্বেগ জানিয়ে কর্মীদের শারীরিক সুস্থতা রক্ষা ও মানবিক আইন মেনে চলার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উরুগুয়ে।
বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আরসে এ হামলাকে ‘নৃশংস ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নীতি নিরস্ত্র বেসামরিকদের ওপর হামলার কোনো যৌক্তিকতা দেয় না।
চিলি নিশ্চিত করেছে, তাদের দুইজন নাগরিক ফ্লোটিলায় ছিলেন। সরকারি মুখপাত্র ক্যামিলা ভায়েজো ঘোষণা দেন, এ মিশন ছিল ‘চিলি রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনপ্রাপ্ত’ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফ্লোটিলাটি ৪০টির বেশি নৌযান ও ৫০০ আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে গঠিত, যা গাজা থেকে প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল (১৪৮ কিমি) দূরে আটকানো হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, ১৫টি নৌযান দখল করা হয়েছে এবং একটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় র্যাম করা হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে তারা কয়েকটি নৌযান আটক করেছে এবং যাত্রীদের বন্দরে নিয়ে গেছে। সরকারি বিবৃতিতে এ বহরকে ‘হামাস ফ্লোটিলা’ বলে অপবাদ দেওয়া হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available