মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: আনারসের রাজধানী টাঙ্গাইলের মধুপুরে জমে উঠেছে জমজমাট বাজার। পাইকারী ক্রেতা বেশি থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। গরম বেশি থাকার কারণে ফলের মোকামে চাহিদাও বেশি। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর মধুপুর গড়ে আনারসে ৭শ’ ৬০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ২শ’ মেট্রিকটনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে মধুপুরে ৬ হাজার ৬শ' ৩০ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩শ’ ৯২ হেক্টরে জলডুগি এবং ৪ হাজার ২শ' ২০ হেক্টরে ক্যালেন্ডার প্রজাতির আনারস আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইন থেকে আমদানি এমডি-টু ১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ক্যালেন্ডার ৩৮ মেট্রিকটন, জলডুগি ২৭ মেট্রিকটন ও এমডি-টু ৩৫ মেট্রিকটন।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, গড় এলাকায় প্রথম ইদিলপুর গ্রামের গারো নারী মিজি দয়াময়ী সাংমা আনারস চাষ শুরু করেছিলেন। ১৯৪২ সালে ভারতের মেঘালয়ের তার আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে ৭৫০টি আনারষের চারা আনেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে আনারস চাষ বাড়তে থাকে। এখানকার লাল মাটির আনারস জিআই পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
এ আনারস এখন মধুপুরের অর্থনীতির প্রধান উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়। প্রায় ৬ মাস চলে বেচাকেনা। মধুপুর গড়ের জলছত্র হচ্ছে আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার। এছাড়াও মোটের বাজার ও গারো বাজারও আনারস বেচাকেনার জন্য বিখ্যাত। এসব বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার আসেন আনারস কিনতে।
জলছত্র বাজারে গিয়ে কথা হয় আনারস নিয়ে আসা ভ্যান চালক শাহীনের সাথে। তিনি জানান, এবার বাজার ভালো যাচ্ছে। যে আনারস কয়েক দিন আগে ৪০ টাকা বিক্রি হতো, এখন সেইটা ২/৩ টাকা বেশি দামে টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাইকার চাহিদা বেশি থাকায় এমন হচ্ছে বলে তার ধারণা।
সুরুজ আলী জানান, আনারসের একটি চারার দাম ৪-৫ টাকা, রোপণ খরচ এক টাকা, পাতার ঢাক খরচ, নিড়ানী খরচ, সার, বিষ, রোদে পোড়া থেকে রক্ষার ঢাক, পাকানো, কর্তন, পরিবহন খরচ নিয়ে ১৫-১৮ টাকা পড়ে যায়।
শামসুল হক জানান, যেখানে ছোট টিকটিকি ট্রাকের ভাড়া ছিল ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় আনারসের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সদস্য বেলাল জানান, মধুপুর থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট বড় আনারসের গাড়ি বিভিন্ন জেলায় যায়। সড়ক পাকা থাকায় বাগানেও যায় গাড়ি। বাগান থেকেও মোকামে যাচ্ছে আনারস।
হোটেল ব্যবসায়ী সুমন জানান, আনারসের মৌসুমে বাজার চাঙ্গা থাকে। বেচাকেনা বেশি হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে লোকজন থাকে।
জলছত্র ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আনারসের গাড়ি যায়। চালক, ব্যাপারীসহ বাজারে আসা মানুষদের জন্য তাদের অফিসেই কম খরচে থাকার সুব্যবস্থা করেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available