• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৮ই কার্তিক ১৪৩২ রাত ০৯:২২:১৩ (23-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

সড়ক নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা ও তারুণ্যের ভাবনা

ইশতিয়াক ইমন: বেসরকারি সংস্থা রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে সড়কে ৩৪ হাজার ৮৯৪টি রোড ক্রাশে নিহত হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮২ জন। আহত মানুষের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫৯৭। দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চলছে ছোট ছোট যানবাহন। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক-মহাসড়কে খানাখন্দ ও বেহাল দশা লক্ষ করা যাচ্ছে। নির্ধারিত গতিসীমা না মানা, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা কাঠামো এমন দুরবস্থার সৃষ্টি করেছে। যানবাহনের জন্য তৈরি করেছে মরণফাঁদ। ফলে প্রতিদিনই সড়কে ছোট-বড় রোড ক্রাশ এবং প্রাণহানি ঘটছে। বেসরকারি সংস্থা-যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে মে, জুন এবং জুলাই মাসে সড়ক, রেল ও নৌ পথে ১ হাজার ৭৭৪টি  রোড ক্রাশে ১ হাজার ৮৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিন মাসের গড় হিসাবে দেখা গেছে প্রতিদিন রোড ক্রাশে প্রাণহানি হচ্ছে ২০ জনের।  এর মধ্যে মে মাসে ৫৯৭টি রোড ক্রাশে ৬১৪ জন নিহত এবং ১১৯৬ জন আহত হয়েছেন। পরের মাস জুনে ৬৭১টি রোড ক্রাশে ৭১১ জন নিহত এবং ১৯০২ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ জুলাই মাসে সংস্থাটির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৫০৬টি রোড ক্রাশে ৫২০ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১৩৫৬ জন। আপাত নিরাপত্তার চিত্র এখন এমনই। নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা মানুষদের আমরা কি তবে দোষারোপ করব? না, হাইওয়ে পুলিশেরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। এক সাক্ষাৎকারে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৪ হাজার ৪২৫ কিলোমিটার সড়কে এলাকার জন্য তাদের ম্যানপাওয়ার মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে অফিসিয়াল ছুটিতে চলে যায় ২০ শতাংশ। তখন রেগুলার ওয়ার্কিং ফোর্স থাকে ২ হাজার। তাদের দিয়ে কাভার করাটা কষ্টসাধ্য।  মানব সৃষ্ট এই মৃত্যুকে আটকাতে প্রয়োজন এখন সড়ক নিরাপত্তা আইন এর কঠোর বাস্তবায়ন এবং আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ছাত্রদের দাবির মুখে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে পরিবহন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়ক ব্যবহারকারীদের আচরণগত ঝুঁকির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা যথাযথভাবে নেই। এ ছাড়া এই আইনে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘ ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় উপেক্ষিত রয়েছে। সীমাবদ্ধতা আছে আরও কিছু ব্যাপারে। তাই সড়কের নিরাপত্তায় একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রয়োজন। এই আইনে স্পষ্ট করা হোক চালক ও বাস সহকারীদের বেতন কাঠামো এবং শ্রমঘণ্টা নিয়ে। স্পষ্ট হোক থ্রি হুইলারের ব্যাপারে নির্দেশনা। বাসে নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও জোরালো নির্দেশনা আইনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হোক। উন্নত দেশের ন্যায় সরাকারি বীমা নীতিকে রোড ক্রাশ কবলিত মানুষের জন্য যুক্ত করাও হবে এক অনন্যতা।রোড ক্রাশের কারণে শুধু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তা নয়, একইসঙ্গে মানুষের শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত একটি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত অমানবিক কষ্ট ভোগ করে থাকে। তাদের এই ক্ষতি অপূরণীয়। অনেক ক্ষত্রেই তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। আর যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এরূপ দুর্ঘটনার শিকার হয়, তাহলে এর প্রভাব হয় আরও দীর্ঘমেয়াদী।দুর্জয় তারুণ্য রুখে দিতে পারে সকল অনিয়ম। সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতে তাই তরুণদের ভূমিকা হোক জোরালো। ব্যক্তি থেকে পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্র শুরুটা তরুণদেরই করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে আমরা যখন নির্দেশিত আইন মেনে চলব তখন তা দেখে আমাদের আরও ৫ জন বন্ধু শিখবে। তার থেকে আরও ৫ জন এভাবে এটি তরুণদের মধ্যে বিকাশ লাভ করবে এবং তা ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে।বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি অঙ্কনে সমাজকে বার্তা দেয়া সহজ। এ পন্থা তরুণরা নিতে পারে। বিশেষ করে, বিতার্কিকরা যাদের কাজ নতুন বয়ান তৈরি করা। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় বিতর্ক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যাপকভাবে সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়া যায় তা পরিবর্তনে জোরালো ভূমিকা রাখবে। তাই পরিবর্তন সম্ভব, যদি আমরা সকলে মিলে চাই।লেখক: সাধারণ সদস্য, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন estiak66emon@gmail.com