কক্সবাজার প্রতিনিধি : টানা ছুটি ও শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন বিজয়া দশমী ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখও পর্যটকের মিলন মেলা বসেছিল। হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টে কোথায়ও তিল পরিমাণ জায়গা খালি ছিল না।
বৈরি আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে আগত পর্যটকের একটু ভোগান্তি হলেও, তাদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজনকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে বিজয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের এই আয়োজন।
জেলার ৯টি উপজেলার মণ্ডপের প্রতিমা ট্রাকবোঝাই করে সৈকতে আনা হয়েছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে প্রতিমা। চকরিয়া ও পেকুয়ার মণ্ডপগুলোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে মাতামুহুরী নদীতে।
বিকেল ৫টায় মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে সাগরে প্রতিমাগুলো বির্সজন দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু। তিনি বলেন, প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বৃহৎ এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে, দূর-দূরান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আজকের এই বিশেষ দিনে এখানে এসে জড়ো হয়েছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আজকের আয়োজন শেষ হয়েছে।
সকাল থেকে সৈকত এলাকায়, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাড়তি টহল দেখা গেছে। এছাড়াও জরুরি অবস্থায় সহায়তা প্রদানে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত কন্ট্রোল রুম।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদারের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সফল করতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। পাশাপাশি আগত পর্যটকদের ভ্রমণ যেন সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করা যায় সেক্ষেত্রেও প্রশাসন তৎপর আছে। পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক রাজেন্দ্র রায়। তিনি বলেন, কক্সবাজারের আয়োজনটাই সারাদেশে বড়। তাই এখানে ছুটে এসেছি মাকে বিদায় দিতে। প্রশাসন খুব ভালো কাজ করছে। তারা পর্যটকদের সহযোগিতা করছে। চারদিনের টানা ছুটি ও বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে আগামী কয়েক দিন কক্সবাজারে ৫ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। কোনো হোটেল খালি নেই বলে জানিয়েছে হোটেল মালিক ব্যবসায়ী সমিতি।
সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, শতভাগ রুমের অগ্রিম বুকিং রয়েছে। আগামী কয়েকদিন প্রচুর চাপ থাকবে। ছুটিতে আগত পর্যটকের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক হতে পারে। কেউ যেন অতিরিক্ত রুম ভাড়া না নেয় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সৈকত এলাকার নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শহরে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়েছে। আমরা শুরু থেকেই প্রতিমা বিসর্জন সফল করার লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, সবার নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের তৎপরতা জারি থাকবে। এদিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। ফলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৈরি আবহাওয়ায় সৈকতে গোসল ঝুঁকিপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি বলে জানান সি সেইফ লাইফ গার্ডের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, লাইফগার্ড সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যে কোনো সহায়তায় আমরা প্রস্তুত আছি। তবে এক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতনতা জরুরি। গোসলের বেলায় যেহেতু সৈকতে গুপ্তখাল আছে তা মাথায় রাখতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available