• ঢাকা
  • |
  • বৃহঃস্পতিবার ৮ই কার্তিক ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:৪৪:৫৫ (23-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

লক্ষ্মীপুরে মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ

২৩ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৩:৩৪:৩৭

সংবাদ ছবি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো যেন প্রতিবছর মেঘনার এক নতুন উন্মত্ত রূপ দেখছে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি গতিতে নদীভাঙন গ্রাস করছে এই অঞ্চলটিকে। গত এক দশকে মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষাধিক মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

চলমান এই ভাঙ্গনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যার মধ্যে গত ১০ বছরেই ১৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা গ্রাস করেছে মেঘনা নদী। চলতি মাসেও নদীভাঙ্গন রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে রামগতির বয়ারচর এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।

Ad
Ad

কমলনগর উপজেলায় ২০১৬ সালে শত বছরের পুরোনো ফলকন ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ২০১৯ সালের অক্টোবরে লুধুয়া ফলকন ফয়জুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেঘনার নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চরমার্টিন, চরকালকিনি, সাহেবরহাট ও চরফলকন ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ ও নবিগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

Ad

স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে রামগতি ও কমলনগরের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার মাটির বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরপর সেই বাঁধ আর ভালোভাবে মেরামত না হওয়ায় জোয়ারের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করে নদীভাঙনের তীব্রতা বাড়িয়েছে। গত ১০ বছরে নদীভাঙ্গনের গতি বেড়েছে অন্তত তিন গুণ। এতে শুধু জমি নয়, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাটসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙন আতঙ্কের পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নিয়মিত ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে ও ফসলের মাঠে। চলতি বছর যোগ হয়েছে এক নতুন বিপদ। জোয়ারের পানিতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে লবণাক্ততা। ফলে পানির উৎস, চাষের জমি এবং জীবনধারণের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। নলকূপে লোনা পানি আসায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফসলের উৎপাদন কমছে এবং ফলগাছ মরে যাচ্ছে।

চরকাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব মোতালেব মিয়া জানান, গত বিশ বছরে চরমার্টিন এলাকার সাত জায়গায় ভাঙনের শিকার হয়ে পৈতৃক ভিটেসহ নিজের ক্রয়কৃত বাড়ির সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন চরকাদিরা এলাকায় বেঁড়ির পাশে বসবাস করছেন তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ঠিকানা জটিলতার কারণে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি।

ভাঙনের শিকার চর কালকিনির জোলেখা বেগম নামের এক নারী জানান, ‘বিয়ের পর স্বামীর ভিটে নদীতে তলিয়ে গেলে স্বামীসহ বাবার বাড়িতে চলে আসি। সেটিও পানিতে তলিয়ে গেলে নানার বাড়িতে সবাই আশ্রয় নেই। একসময় নানার বাড়িও নদীতে তলিয়ে যায়। এখন সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এরপর কোথায় যাব, জানি না।’

নদীতে ভিটেমাটি হারাদের আন্দোলনরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক আবদুস সাত্তার পলোয়ান জানান, মেঘনার ভাঙনে কি পরিমাণ গ্রাম, স্থাপনা আর সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। তিনি সরকারিভাবে তা নির্ণয় করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও বর্তমান জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, ‘জেলার ৪টি উপজেলা মেঘনা উপকূলীয় হলেও রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার বেশিরভাগ স্থান নদী ভাঙ্গণের শিকার হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘প্রায় ৪ বছর আগে এ দুইটি উপজেলার ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল। তবে ঠিকাদারদেরও কিছু গাফিলতি ও অর্থ ছাড়ের সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে।’

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ‘নদী ভাঙনের শিকার মানুষদের সরকারি সহায়তা প্রদানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ দ্রুত মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







সংবাদ ছবি
বিশ্ববাজারে আবার বাড়ল স্বর্ণের দাম
২৩ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৫:২৫:১৭

সংবাদ ছবি
ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৪ জনের, হাসপাতালে ৮০৩
২৩ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৫:১২:৩১


সংবাদ ছবি
বনানীতে মি. ডিআইওয়াই’র স্টোর উদ্বোধন
২৩ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৪:৫৪:২৯


Follow Us